Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামনিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র কাম্য নয়

নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র কাম্য নয়

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে শতাধিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিনিধি সমন্বয়ে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি অর্থাৎ বাংলাদেশকে ওই সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য দাওয়াত করা হয়নি। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল গণতান্ত্রিক অধিকার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করাই বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি। সংবিধানের এক অনুচ্ছেদ মোতাবেক ‘বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র যাহা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে পরিচিত।’ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দৃশ্যমান যে, ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি প্রকারান্তরে অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ। কারণ, ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ক্ষমতার আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ‘গণতন্ত্র’ নামক শব্দটিকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে প্রয়োগ করে ক্ষমতার মজা গ্রহণ করেছে।

পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল জেনারেল আইয়ুব খান বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা গ্রহণ করে দেশ শাসন করেছেন গণতন্ত্রের নামে। তখন তিনি নাম দিয়েছিলেন ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ বা বেসিক ডেমোক্র্যাসি। আইয়ুবি গণতন্ত্রে ৮০ হাজার বিডি মেম্বারের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার বিধান করা হয়। তখন বিডি মেম্বাররা কোরবানির গরুরহাটের মতো বিভিন্ন হাটে বিভিন্ন দরে বিক্রি হয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে। সফল কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রবক্তা লেনিন বলেছেন যে, “আসলে ‘বর্জুয়া গণতন্ত্র’ শুধু শোষণকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে। যে পর্যন্ত ভ‚মি এবং অন্যান্য উৎপাদন ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকবে, সে পর্যন্ত সবচেয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অবশ্যই হবে বুর্জোয়া একনায়কত্ব এবং গুটিকয় ধনীকের হাতে থাকবে বিষয়টি সংখ্যাগরিষ্ঠ মেহনতি মানুষের নিষ্পেষণের যন্ত্র।”

বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর দেশের গণতন্ত্র পর্যবেক্ষণ করে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী নাম দিয়েছিলেন ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’। অর্থাৎ এ ধরনের গণতন্ত্র হলো এমন একটি পদ্ধতি, যাতে শুধু কর্তৃপক্ষের বা শাসকদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতাসহ সব মৌলিক অধিকার। সংবিধানে রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়েছে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।’ রাজতন্ত্র বা ঔপনিবেশিক ভাবধারায় যদি রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তবে রাষ্ট্রের নামের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল থাকে না। আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলেছেন যে, ‘For the People, by the People and of the people|।’ অর্থাৎ মানুষের জন্য মানুষের দ্বারা মানুষের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিই গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের প্রতিফলন ঘটানোর যে পদ্ধতি তা হলো নির্বাচন। বাংলাদেশে নির্বাচন পদ্ধতি আজ যে অবস্থায় চলে গেছে তা পর্যালোচনা করলে গণতন্ত্রের অবস্থান কী অবস্থায় আছে, তা বুঝতে কষ্ট হয় না। সরকার সমর্থিত একটি পক্ষ বলে বেড়াচ্ছে যে, ‘আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র’। যদি তাই হয় গণমানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রয়োগ বিধি কোন পর্যায়ে আছে বা এটিকে কি কোনো ভাবে বিবেচনা করা যায়?

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments