Monday, March 20, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামনির্মাণসামগ্রীর চড়া মূল্য

নির্মাণসামগ্রীর চড়া মূল্য

দেশে রড, সিমেন্ট, ইট, বালু ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যক্তিগত বাড়িঘর নির্মাণ ও আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বস্তুত সামগ্রিক অর্থনীতিতেই এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশে করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও পুরোদমে শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্মাণ মৌসুম হওয়ায় শহর-গ্রামে ভবন নির্মাণের হার বৃদ্ধিতে বাজারে নির্মাণসামগ্রীর চাহিদাও বাড়ছে। এ অবস্থায় নির্মাণসামগ্রীর উচ্চমূল্য কাক্সিক্ষত নয়। এদিকে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সামগ্রিকভাবে দেশের নির্মাণশিল্পে ভাটা দেখা দেওয়ায় এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।

এ অবস্থায় নির্মাণসামগ্রীর দাম কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দেশের নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাহত হবে এবং এতে এ শিল্পে জড়িত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত ২ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা কোনোমতেই কাম্য নয়।

নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো হচ্ছে-ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া এবং করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, কয়লা বিক্রিতে সিন্ডিকেটের কারণে বর্তমানে এ জ্বালানির দাম টনপ্রতি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে এবং এ কারণে স্বভাবতই ইটের দামও চড়া। এ অবস্থায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিদেশ থেকে রড আমদানির অনুমতি চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

একইসঙ্গে দেশের নির্মাণসংশ্লিষ্ট পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে এবং নির্মাণ খাতে চলমান অস্থিরতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ সংগঠন, যা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করি আমরা।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি এবং বিভিন্ন পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে চারটি প্রধান ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে;

এগুলো হলো-বৈশ্বিক খাতে প্রত্যাশার চেয়ে পুনরুদ্ধারের গতি কম; বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হারে ঊর্ধ্বগতি; শ্রমবাজারে কর্মের অভাব এবং পণ্য পরিবহণ খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। বিশ্বের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ও আর্থিক কাঠামোর করুণ পরিণতির ব্যাপারে ইতঃপূর্বে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।

লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট করোনা মহামারির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিপর্যয় নেমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে নির্মাণসামগ্রীর দাম কমিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments