Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeবিনোদননিপুণের বিরুদ্ধে জায়েদের আদালত অবমাননার অভিযোগ

নিপুণের বিরুদ্ধে জায়েদের আদালত অবমাননার অভিযোগ

সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে বসায় নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছেন জায়েদ খান।  

বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি করা হয়েছে বলে জানান আবেদনকারীর আইনজীবী আহসানুল করিম।  

“চেম্বার আদালত স্থিতাবস্থা দেওয়ার পর যখন নিপুণ আক্তার সে আদেশ অমান্য করছিল তখন তাকে সতর্ক করে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। নোটিশ দেওয়ার পরও তিনি সতর্ক হননি।

বরং অব্যাহতভাবে আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে চলেছেন। যে কারেণ তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে আবেদন করা হয়েছে। আগামী রবিবার আবেদনটি আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে উপস্থাপন করা হতে পারে। ” 

গত ২৮ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের পরদিন ঘোষিত ফলে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চনকে এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলে দেখা যায়, নিপুন আক্তারের চেয়ে ১৩ ভোট বেশি বিএফডিসির সাধারণ সম্পাদক পদে জয় পান জায়েদ খান।  

নির্বাচনের সময়ই টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করেছিলেন নিপুণ। তাতে সাড়া না পেয়ে তিনি আপিল করেন। তার আপিলে ভোটের পুনর্গণনা হওয়ার পর ফল একই থাকে। এরপর নিপুণ সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে ভোট কেনার অভিযোগ তোলেন।  

তার আবেদনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে করণীয় জানতে আবেদন করেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে আপিল বোর্ডকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলে দুই পক্ষকে নিয়ে বসার উদ্যোগ নেন সোহান। পরে নির্বাচনী আপিল বোর্ডে জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য চুন্নুর পদ বাতিলের আবেদন করে।

কিন্তু ২৯ জানুয়ারির পর নির্বাচনী আপিল বোর্ড বিলুপ্ত হয়েছে এবং এ আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নাই দাবি করে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সে বৈঠকে যাননি জায়েদ খান। সেদিন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান জায়েদ খানের প্রার্থীতা বাতিল করে সাধারণ সম্পাদক পদে চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারকে  জয়ী ঘোষণা করেন।

তার পরদিনই সমিতির নির্বাচনে বিজয়ী সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন ও আপিল বোর্ডের ঘোষিত সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তারসহ  নির্বাচিতরা শপথ গ্রহণ করেন। শপথের পরদিনই অর্থাৎ ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান জায়েদ খান।  

সেদিন জায়েদ খানের সে আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে জায়েদ খানের প্রার্থীতা বাতিল ও নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। সেই আদেশে আদালত বলে দেন, সমিতির নির্বাচিত সাধারণ 

সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খানের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যাতে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না হয়।   

সেই সঙ্গে গত ২ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তরের চিঠির প্রেক্ষিতে গত ৫ ফেব্রিুয়ারি নির্বাচনী আপিল বোর্ডের দেওয়া এ সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে রুলও জারি করেন আদালত।  

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজসেবা অধিপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক, উপপরিচালক, সমিাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সোহানুর রহমান সোহান, মোহাম্মদ হোসেন, নিপুণ আক্তার ও মোহাম্মদ হোসেন জেমিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলে ১৫ ফেব্রুয়ারি রুল শুনানির তারিথ রাখা হয়।  

সে আদেশ স্থগিত চেয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন নিপুন আক্তার। পরদিন অর্থাৎ ৯ ফেব্রুয়ারি সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে ওই পদে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যিন্ত ‘স্থিতাবস্থা’ দেন।  

চেম্বার বিচারক বিচারক ওইদিন আদেশে বলে দেন, ‘আজকে হলো ৯ তারিখ। এই কয়দিন (১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যবন্ত) কিচ্ছু হবে না। কেউ ঢুকবে না, আমি বলে দিচ্ছি। ’ সেদিন চেম্বার আদালত নিপুণ আক্তারের আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।  

পরে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য উঠলে নিপুণ আক্তারের আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, তারা হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি পেয়েছেন। এখন হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভটু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে চান।   তখন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ নিপুন আক্তারের লিভটু আপিলটি ১৪ ফেব্রুয়ারি  শুনানির জন্য রাখেন।  

পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি আদেশে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশে চেম্বার আদালতের ‘স্থগিতাদেশ’ ও ‘স্থিতাবস্থা’ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তের বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টে বিচারাধীন রুল নিষ্পত্তি পর্যরন্ত তা অব্যাহত রাখতে বলা হয়।  

ওইদিন আপিল বিভাগের আদেশের পর জায়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করিম আদালতকে বলেন, চেম্বার আদালতের আদেশ অমান্য করে নিপুন আক্তার সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেছেন। আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন।  

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, চেম্বার আদালতের যে আদেশ সেটিই অব্যাহত থাকবে। কেউ চেয়ারে বসলে ব্যবস্থা নেন। সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশের পর নিপুন আক্তার সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার বসে নিজেকে আবার জানান দেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সে  খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে বৃহস্পতিবার নিপুন আক্তারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করলেন।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে নিপুণ আক্তারকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।  

এদিকে গত বুধবার থেকে হাইকোর্টে রুল শুনানি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার আদালত রুল শুনানি ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্য ন্ত  মুলতবি রেখে ২৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখেছেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments