: নিউইয়র্কে ১০দিন ব্যাপী প্রথম ভার্চুয়াল বাংলা বইমেলা শুরু হচ্ছে ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২৯-তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। করোনাভাইরাসের কারণে এই মেলা হবে ভার্চুয়াল, সরাসরি দেখা যাবে ইউটিউব ও ফেসবুকে। বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার বাইরে বৃহত্তম ও সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এই বইমেলায় এবছর বিশ্বের ৩০-টিরও অধিক দেশের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যপ্রেমী বাঙ্গালিরা অংশগ্রহণ করছেন।
মুজিব বর্ষে আয়োজিত এই মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। মেলাকে স্বাগত জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, নিউইয়র্ক স্টেট গভর্ণর এন্ড্রু কুমো ও বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান।
১০-দিনের অধিকাংশ কার্যক্রমই জাতির জনকের প্রতি নিবেদিত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতর্পণ, জাতির জনকের প্রতি নিবেদিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি এবং বঙ্গবন্ধুর স্মরণে বিশেষ কনসার্ট। আলোচকদের মধ্যে রয়েছেন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, প্রবীণ রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ, কবি নির্মলেন্দু গুণ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, কবি কামাল চৌধুরী ও মুক্তিযোদ্ধা-বিজ্ঞানী ড. নূরুন নবী। স্বরচিত কবিতা পড়বেন কবি আসাদ চৌধুরী, হাবিবুল্লাহ সিরাজী, মনসুর মুসা ও আরো অনেকে।
নাটক ও মুক্তিযুদ্ধ এই শীর্ষক একটি আলোচনায় থাকছেন আতাউর রহমান, রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও ম হামিদ।
সাহিত্য বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেবেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সেলিনা হোসেন, সমরেশ মজুমদার, ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক। উত্তর আমেরিকা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত শতাধিক কবি ও লেখক এই মেলার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
এই বইমেলার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি অপ্রকাশিত কবিতা পাঠিয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। অসুস্থতা সত্বেও তিনি এই মেলার জন্য একটি ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেছেন, যেখানে তিনি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকার প্রতি আলোকপাত করেছেন।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে আয়োজিত কনসার্টে অংশ নিচ্ছেন মাহমুদুর রহমান বেনু, শাহীন সামাদ, কুমার বিশ্বজিৎ, হিমাংশু গোস্বামী এবং ফরিদা পারভীন ও গাজী আবদুল হাকিম। জীবনমুখী গানের শিল্পী নচিকেতা একটি পূর্ণাংগ কনসার্টে অংশগগ্রহণ করবেন। এছাড়া উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিল্পীও সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। আরো থাকছে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ভিত্তিতে একটি একাঙ্কিকা নাটক, লিখেছেন ফেরদৌস সাজেদিন। অভিনয়ে শিরীন বকুল।
বইমেলার অংশ হিসাবে আয়োজিত হয়েছে একটি শিশু-কিশোর মেলা, যেখানে উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত নতুন প্রজন্মের অভিবাসী সদস্যরা জাতির জনকের প্রতি কথায়, কবিতায় ও গানে তাদের শ্রদ্ধা জানাবে।
মেলার একটি বিশেষ আকর্ষণ হবে ‘বাংলাদেশি অভিবাসী দিবস’। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক স্টেট অভিবাসী বাংলাদেশিদের বহুজাতিক সংস্কৃতি নির্মাণে তাঁদের ভূমিকার স্বীকৃতি হিসাবে ২৫ সেপ্টেম্বরকে ‘বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্টস ডে’ হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। এইদিন ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে প্রথমবারের মত বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। এই দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বাংলা বইমেলা নিয়ে থাকছে বিশেষ অনুষ্ঠান বইমেলা দেশে-বিদেশে। এতে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, টোকিও, সিডনী, লন্ডন, টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, ওয়াশিংটন এবং নিউইয়র্ক বইমেলার উদ্যোক্তারা ছাড়াও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী, বাংলা একাডেমীর মহা পরিচালক, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক অংশগ্রহণ করেন। সঞ্চালন করেন ফাহিম রেজা নূর।
মেলার আরো একটি আকর্ষণ হবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য মুক্তধারা/জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার। মুক্তধারার উপদেষ্টা গোলাম ফারুক ভুঁইয়ার অর্থানুকুল্যে প্রতিষ্ঠিত এই পুরষ্কারের মূল্যমান ২,৫০০ মার্কিন ডলার। এছাড়া এবছর থেকে চালু হচ্ছে বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানরত বাঙালি লেখকদের প্রকাশিত সেরা গ্রন্থের জন্য একটি বার্ষিক পুরষ্কার, যার মূল্যমান ৫০০ ডলার।
অভিবাসী পাঠকদের জন্য মেলায় ২০২০ সালে প্রকাশিত বাংলা বই বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলা একাডেমি, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, সময় প্রকাশনী, অনন্যা, বেঙ্গল পাবলিকেন্স, প্রথমা প্রকাশন, আনন্দ পাবলিশার্স, দেজ পাবলিশিং হাউজ, পত্রভারতীসহ বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার ২৫-টির মত প্রকাশনা সংস্থা বইমেলায় অংশ নিচ্ছে। মেলা চলাকালীন সময়ে এই সব প্রকাশকের বই আন্তর্জাতিক মূল্যের ৫০ শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্যে অন-লাইনে বিক্রয় হবে। প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বাংলা বইমেলায় পৃথিবীর সকল প্রান্তের পাঠকরা বই ক্রয় করতে পারবেন বলে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে। মেলার অংশ হিসাবে উভয় বাংলার নির্বাচিত প্রকাশকবৃন্দ পাঠক ও লেখকদের সঙ্গে এক আলাপচারিতাতেও মিলিত হবেন। এই উপলক্ষে কামরুন জিনিয়ার সম্পাদনায় বইমেলার স্মারকগ্রন্থ ২০২০ প্রকাশিত হচ্ছে।
ঢাকার আই এফ আই সি ব্যাঙ্ক এই মেলার প্রধান পৃষ্টপোষক। আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বাংলাদেশি ব্যবসায়িক সংস্থা ও ব্যক্তি। ভার্চুয়াল এই মেলাটি ১৮ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। সোম থেকে শুক্রবার নিউইয়র্ক সময় রাত ৯টা থেকে ১২.৩০ পর্যন্ত, শনি ও রোববার সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে। ১০-দিন ব্যাপী এই বইমেলার কর্মসূচির বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় মুক্তধারার সদ্য নির্মিত ওয়েবসাইটে, www.nyboimela.orgএই ঠিকানায়।