Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeজাতীয়না ফেরার দেশে সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ

না ফেরার দেশে সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ

একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (৭৭) মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দুপুরে ঢাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। অবিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বিএফইউজের নেতৃত্বদানকালে সাংবাদিক সমাজের পেশাগত মান উন্নয়নে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের লাশ রোববার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে রাখা হবে। দুপুর দেড়টায় সেখানেই তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দাফন করা হবে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে।

তার মৃত্যুর খবরে সাংবাদিকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন বিবৃতিতে বলেছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিতে যারা ভূমিকা রেখেছেন, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন তাদের অন্যতম। পেশার মর্যাদা রক্ষা এবং সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার সাহসী ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে সাংবাদিক সমাজ একজন অভিভাবক হারাল।

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও ১৯৭২ সালে এলএলবি পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে। তিনি ডেইলি স্টারের উপসম্পাদক, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক, ডেইলি টেলিগ্রাফের সম্পাদক এবং নিউজ টুডের সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ড পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। তার জন্ম ১৯৪৫ সালের ৩০ নভেম্বর নরসিংদীর মনোহরদীর নারান্দী গ্রামে।

তিনি ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের কাযর্করী সদস্য হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নে যুক্ত হন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এবং ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন তিনি। সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন।

একাত্তরের ২৫ মার্চ তিনি পাকিস্তান অবজারভারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেন এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ অবজারভারে যোগ দেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেখানে প্রধান প্রতিবেদক ও বিশেষ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোর সাংবাদিকদের ফেডারেশন সমন্বয়ে গঠিত দক্ষিণ এশিয়া সাংবাদিক সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের (সাফমা) সভাপতি ছিলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। এরপর ২০০২ থেকে আবার দুই দফা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন। ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন। প্রথমে ছাত্রলীগ এবং পরে বাংলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ২০০০ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তথ্য উপদেষ্টাও ছিলেন কিছুদিন। কাজের স্বীকৃতি হিসাবে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ শেরেবাংলা পদক, মওলানা আকরম খাঁ স্বর্ণপদক, নরসিংদী প্রেস ক্লাব পদক, মাদকবিরোধী ফেডারেশন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পদক ও সম্মাননা অর্জন করেন।

তার মৃত্যুতে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)-এর সভাপতি এ কে আজাদ ও সহসভাপতি শহীদুল্লাহ খান বাদল, এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু ও সাধারণ সম্পাদক ইনাম আহমেদ, প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি ওমর ফারুক ও মহাসচিব দীপ আজাদ এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-এর (একাংশ) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু শোক প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নূরুল আমিন রোকন এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-এর (একাংশ) সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম এক যুক্ত বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব।

রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিশদলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান হায়দার ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন শোক প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments