প্রায় এক মাস পর সামনে এল চঞ্চল্যকর তথ্য। হতে পারতো বড়সড় কোনো বিপদ, কিন্তু তার আগেই সেই বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। গতমাসে অল্পের জন্য চাঁদের উত্তর মেরুর কাছে আমেরিকার পাঠানো যানের সঙ্গে সংঘর্ষের হাত থেকে বাঁচলো ভারতের পাঠানো চন্দ্রযান-২। শেষ মুহূর্তে ওই সংঘর্ষ রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে ইসরো। ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় ১ মাস আগে, গত ২০ অক্টোবর। তবে, মঙ্গলবারই (১৬ নভেম্বর) এই খবর জানিয়েছে ইসরো।
সংস্থার পক্ষ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, চন্দ্রের উত্তর মেরুর কাছে এক অঞ্চলে এই সংঘর্ষ ঘটতে চলেছিল। তবে তার এক সপ্তাহ আগেই, ইসরো এবং নাসা দুই মহাকাশ গবেষণা সংস্থাই নিজ নিজ বিশ্লেষণে বিষয়টি ধরতে পেরেছিল।দেখা যায়, ২০ অক্টোবর দুই দেশের দুই মহাকাশযানের মধ্যে রেডিয়াল ব্যবধান ১০০ মিটারেরও কম হতে চলেছে এবং তাদের মধ্যে নিকটতম দূরত্বটি হতে চলেছে প্রায় ৩ কিলোমিটার।
এরপরই ইসরো ও নাসা সংঘর্ষের ঝুঁকি এড়াতে সিএএম সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। ইসরো জানিয়েছে, দুই সংস্থাই ঠিক করে, সম্ভাব্য সংঘর্ষের দুদিন আগে, অর্থাৎ ১৮ অক্টোবর কলিসন অ্য়াভয়ডেন্স ম্যানুভার বা সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করবে ইসরো। পরবর্তী নিকটতম সংযোগের সময় যাতে দুই মহাকাশযানের মধ্যে পর্যাপ্ত রেডিয়াল ব্যবধান থাকে, সেটা নিশ্চিত করার মতো করেই এই কৌশলটি নকশা করা হয়েছিল। ১৮ অক্টোবর রাত ৮টা ২২ মিনিটে সিএএম কার্যকর করা হয়।
সংঘর্ষ ওড়ানোর কৌশল প্রয়োগের পর চন্দ্রযান-২ অরবাইটারের পরবর্তী কক্ষপথ ফের নির্ধারণ করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্য অনুযায়ী, যে এখন চন্দ্রযান-২ এর অরবাইটর ঘুরছে, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে এলআরও-এর কাছাকাছি এসে পড়ার আর সম্ভাবনা নেই। গত ২২ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণ করেছিল ইসরো। তার তিনটি অংশ ছিল—অরবিটার, ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান। ২ সেপ্টেম্বর অরবিটার থেকে বিক্রম বিচ্ছিন্ন হয়।
তার শরীরের ভিতরে ছিল প্রজ্ঞান। ৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বিক্রমের পালকের মতো অবতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। অবতরণের শেষ ধাপে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না-পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বিক্রম। ভারতের এই অভিযানের মূল অংশই হল চন্দ্রযানের অরবিটারটি। আমেরিকার যানের সঙ্গে তার সংঘর্ষ হলে ভবিষ্যতের গবেষণা বড় ক্ষতি হতে পারত বলেই দাবি বিজ্ঞানী মহলে।
ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সিএএম বা কলিসন অ্যাভয়ডেন্স ম্যানুভর, চন্দ্রযান-২ বা কোনও মহাকাশ অভিযানের মহাকাশযানে এই প্রথমবার প্রয়োগ করা হলেও, এই কৌশল ব্যবহারের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থার।