ভারতের জনপ্রিয় সিনেমা ‘নায়ক’-এ অভিনেতা অনিল কাপুর একদিনের প্রেসিডেন্ট হয়ে বদলে দিয়েছিলেন পুরো দেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম তারকা সাকিব আল হাসানও নায়ক সিনেমার মতো বদলে দিতে চান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)। ১২ বছর ধরে ৮টি আসরেও দেশের এই ঘরোয়া টুনার্মেন্টটি বিতর্কের বাইরে থাকতে পারেনি। শুরুতে একে আইপিএলের পরের অবস্থানে ধরা হলেও বদলে গেছে পিরিস্থিতি। প্রতিবছরই নানা প্রতিশ্রুতি থাকলেও বিসিসি এর মান উন্নায়নে ব্যর্থ। বিপিএল’র পরে শুরু হওয়া বিগ ব্যাশ, পাকিস্তান, দুবাই, এমনকি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট লীগও এর চেয়ে এগিয়ে গেছে। কাল থেকে মাঠে গড়াচ্ছে বিপিএল’র ৯ম আসর। এবারো আছে নানা অরাজকতা ও অব্যবস্থাপনা। তা নিয়েই দারুণ খেপেছেন সাকিব। গতকাল সংবাদ মাধ্যমে বিপিএল নিয়ে নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন বিশ্বের অন্যতম এই অলরাউন্ডার।
দায়িত্ব পেলে একদিনেও বিপিএল’র বর্তমান চিত্র পাল্টে দিতে পারবেন বলেই দাবি করেন তিনি। সাকিব বলেন, ‘আমাকে যদি প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব দেয়া হয় বিপিএল’র আমার বেশিদিন লাগবে না। আমার ধারণা ১ থেকে দুই মাস লাগবে সর্বোচ্চ সবকিছু ঠিক করতে, খুব বেশি হলে দুই মাসও লাগার কথা না, দুই মাস অনেক দূরের কথা বলছি। ‘নায়ক’ সিনেমা দেখেছেন না? একদিনেও অনেক কিছু করা সম্ভব। যে করতে পারে সে সব করতে পারে।’
বিপিএল’র মান কোথায়! মূল এই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় সাকিবের কথার ঝড়। দেশের টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত দাবি করেন বিপিএল’র চেয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের মান ভালো। মূলত ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের উন্নয়নে বিসিবি’র সদিচ্ছা নেই বলেই জানান তিনি। সাকিব বলেন, ‘পারেনি নাকি চায়নি? জানি না বলাটা কঠিন। চাইলে না পারার কোনো কারণ আমি দেখি না, বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা। আমার ধারণা, আমরা সৎ মনে কখনো চাইনি, ও রকম কিছু করতে। এ কারণেই হয়নি এখনো পর্যন্ত।’ বিপিএল’র বাজার বিসিবি তৈরি করতে পারেনি বলেই দাবি করেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘বাজার (বিপিএল’র) নেই, কারণ তা আমরা তৈরি করতে পারিনি। যদি তৈরি করতে পারতাম, ভ্যালু অ্যাড করতে পারতাম, অবশ্যই এই বাজার অনেক বড় হওয়ার কথা ছিল। আপনি গ্রামেও এমন কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখবেন না, যেখানে ক্রিকেট খেলাটা হচ্ছে না। একদম অজপাড়াগাঁ চলে যান, সেখানেও মানুষ একটা ব্যাট, কোনো রকমে একটা বল, বা বল না পেলে অন্য কিছু দিয়ে বল বানিয়ে খেলছে ক্রিকেট। এমন তো নয়, এটার জনপ্রিয়তা নেই। ১৬-২০ কোটি মানুষের একটি দেশে যেখানে এটি এত পছন্দের খেলা, সেখানে বাজার থাকবে না, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি অন্তত বিশ্বাস করি। সেই জায়গা থেকে আমি মনে করি, মার্কেটিংয়ের জায়গায় এটা বড় একটা ব্যর্থতা, যে কারণে আমরা বড় বাজার তৈরি করতে পারিনি।’
আগের দিন বিসিবি পরিচালক ও খুলনার কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন তিনি ক্রিকেট খেললে বিপিএল নয় আইপিএলেই খেলতেন। ঠিক একদিন পর সাকিবও প্রশ্ন তোলেন বিপিএল’র মান নিয়ে। তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে আমাদের ঢাকা প্রিমিয়ার লীগও আরও ভালোভাবে হয়। কারণ দলটা আগে থেকে গোছাতে পারে, আরও আগে থেকে জানে যে দলটা কী হতে পারে, সেভাবে কাজও হতে পারে। আমার ধারণা, আপনি যদি পরের প্রিমিয়ার লীগের কথা বলেন, সবাই জানে কার কোন দল। বিপিএলে তো কোনো কিছুর ঠিক-ঠিকানা বুঝতে পারি না। ম্যাচ শুরু হওয়ার পর বিপিএল শুরু হয়।’
বিপিএল শুরুর আগে অন্যতম আলোচনার বিষয় ডিআরএস (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম) না থাকা নিয়ে। প্রায় প্রতিটি দলই ভয়ে আছে ডিআরএস না থাকলে ভুল আম্পারিংয়ের শিকার হতে পারেন তারা। তবে বিসিবি’র ভয়ে অনেকেই মুখ মুখতে রাজি নয়। তবে সাকিব সরাসরি জানিয়ে দিলেন, বিসিবি সদিচ্ছার অভাবেই এ আসরের শুর থেকেই থাকছে না ডিআরএস ব্যবস্থা। তিনি বলেন, ‘সদিচ্ছা থাকলে কোনো কিছু থেমে থাকার কিছু আমি দেখি না। সদিচ্ছা থাকলে আমি তো কোনো কারণই দেখি না কেন ডিআরএস থাকবে না, তিন মাস আগে ড্রাফট কিংবা নিলাম হবে না, দলগুলো দুই মাস আগে থেকে ঠিক হবে না এবং ক্রিকেটারদের পাওয়া যাবে। এখন একজন ক্রিকেটার একদিন আসবে, দুইদিনে চলে যাবে, কে কখন আসবে-যাবে, কেউ জানে না। জার্সি পায় না এখনো ক্রিকেটাররা, নিউজে দেখলাম। মানে, যা-তা অবস্থা।’