Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeধর্মনামাজ না পড়া কত বড় পাপ!

নামাজ না পড়া কত বড় পাপ!

দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, ইশারায়—যে অবস্থায় সম্ভব নামাজ পড়তে হবে। একজন মুমিন ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানেই অবস্থান করে, তাকে নামাজ পড়তেই হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘…নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ [ সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩ ]

ঈমান আনার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নামাজ। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অন্যতম ইবাদত। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। পবিত্র কোরআনে প্রায় শতবার সালাত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৮৫ বার (ইসম) নাম বা বিশেষ্য হিসেবে এবং ১৫ বার (ফি’ল) ক্রিয়াপদ হিসেবে এই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। (ইসলাম ওয়েব, ‘লাফজুল সালাতি ফিল কোরআন’)

মুসলমানমাত্রই নামাজ পড়তে হবে। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, ইশারায়—যে অবস্থায় সম্ভব নামাজ ছাড়া যাবে না। একজন মুমিন ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানেই অবস্থান করে, তাকে নামাজ পড়তেই হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘…নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩)

নামাজ না পড়া পরকালে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। ’ (সুরা : মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪২-৪৩)

বেনামাজিকে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের গভীর গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। নূহ, ইবরাহিম ও ইসরাঈল (আ.)-এর ব্যাপারে বর্ণনা করার পর পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা সালাত নষ্ট করল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই ‘গাইয়া’ প্রত্যক্ষ করবে। ’’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৫৯)

‘গাইয়া’ হলো, জাহান্নামের একটি নদীর তলদেশ, যার গভীরতা অনেক, যেখানে আছে রক্ত ও পুঁজের নিকৃষ্টতম আস্বাদ। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

‘গাইয়া’ জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম। (তাফসিরে কাশশাফ ও নাসাফি)।

শুধু পরকালীন শাস্তি নয়, নামাজ না পড়লে ইহকালীন জীবনও বরকতশূন্য হয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির আসরের সালাত কাজা হয় তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল। (মুসলিম, হাদিস : ১৩০৪)

কিয়ামতের দিন বেনামাজি সর্বপ্রথম যে অপদস্থতা ও লাঞ্ছনার শিকার হবে, কোরআনের একটি আয়াতে তার বিবরণ এসেছে, যার মর্ম নিম্নরূপ :

‘স্মরণ করো সেদিনের কথা, যেদিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে। সেদিন তাদের আহ্বান করা হবে সিজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল, তখন তো তাদের আহ্বান করা হয়েছিল সিজদা করতে। ’ (সুরা : কালাম,    আয়াত : ৪২-৪৩)

যে নামাজ পড়ে না তার ঈমান খুুবই দুর্বল। ইসলামে তার হিস্যা খুব সামান্যই। নামাজ না পড়াকে মহানবী (সা.) কুফরি কাজ ও কাফিরের স্বভাব বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এক হাদিসে এসেছে, যার ভেতর নামাজ নেই, তার ভেতর দ্বিনের কোনো হিস্যা নেই। (মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ৮৫৩৯)

নামাজের মাধ্যমে ঈমান ও কুফরের পার্থক্য হয়। জাবির (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত ছেড়ে দেওয়া।

(মুসলিম,  হাদিস : ১৪৮)

নামাজ পরকালে মুক্তির অন্যতম উপায়। বুরাইদা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমাদের ও তাদের (কাফিরদের) মধ্যে (মুক্তির) যে প্রতিশ্রুতি আছে তা হলো নামাজ। সুতরাং যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দেয়, সে কুফরি কাজ করে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২১)

এই হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। একটি ব্যাখ্যা হলো, যখন কেউ নামাজ ছেড়ে দেয়, তখন সে যেন কুফরের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়। তার নামাজ না পড়াটা কুফরি কাজের সমতুল্য। নামাজ না পড়া কুফরিসদৃশ কাজ। তবে ওই ব্যক্তিকে সরাসরি কাফির বলা যাবে কি না, বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

নামাজ পড়া কত বড় সৌভাগ্যের বিষয়! আর নামাজ না পড়া কত বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়! হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যত্নের সঙ্গে আদায় করবে, কিয়ামতের দিন এ নামাজ তার জন্য আলো হবে। তার ঈমান ও ইসলামের দলিল হবে এবং তার নাজাতের অসিলা হবে। আর যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে না, কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নামাজ তার জন্য আলো হবে না। দলিলও হবে না এবং সে আজাব থেকে রেহাইও পাবে না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৫৭৬)

মহান আল্লাহ আমাদের যথাসময়ে গুরুত্বসহকারে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments