রমজান মাস এলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটা আকাঙ্ক্ষা থাকে তারা যেন পুরো মাসটা স্বস্তিতে থাকতে পারেন। এ মাসে যেন দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস ইত্যাদি যেন থাকে নিরবচ্ছিন্ন-এমনটাই আশা করেন তারা।
কিন্তু এবার রমজানের প্রথম দিন থেকেই নানারকম অসংগতি ও অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজধানীর ঘরে-বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। একদিকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে যানজট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, গ্যাস সংকট, সড়কে মৃত্যু, খুন, ডায়রিয়াসহ হরেক রকমের যন্ত্রণা নিয়ে দিনাতিপাত করছে মানুষ। তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে-কোথায় যাবে মানুষ?
রমজান শুরুর আগে থেকেই দফায় দফায় বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। ফলে সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিমই খাচ্ছে না শুধু, ইফতারপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় ইফতারে কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে। এ তো গেল এক ধরনের সংকট। উপরন্তু এতদিন ঘরের বাইরে ভোগান্তি পেরিয়ে বাসায় ফিরে অন্তত রান্নাটা করতে পারত রাজধানীর মানুষ; কিন্তু রমজান শুরুর পর থেকে ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। রোজা রেখে পছন্দের ইফতারিও তৈরি করতে পারছে না তারা। বাসায় যখন গ্যাস নেই, তখন তৈরি হয়েছে আরেক দুঃসংবাদ।
ফের বাড়ানো হয়েছে এলপিজির দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাইরে থেকে ইফতারি কেনা মানুষের জন্য তৈরি করছে বাড়তি সংকট। ওদিকে রাজধানীর যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঘর থেকে বেরোলেই স্থবির হয়ে যায় জীবন। যানজটে অলিগলি, প্রধান সড়ক সর্বত্রই এখন স্থবিরতা। একে তো তীব্র গরম, তার ওপর অসহনীয় যানজট, জীবন যেন ওষ্ঠাগত। রাজধানীবাসীর আরেকটি আতঙ্কজনক অভিজ্ঞতা হলো সড়কে মৃত্যু। ঘর থেকে বেরোনোর পর সুস্থ শরীরে কেউ ঘরে ফিরতে পারবে কিনা, এটা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
রাজধানীতে মাসে গড়ে ১৫ থেকে ১৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে ঘাতক পরিবহণ। ওদিকে বেড়েছে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি। এই দুই অপতৎপরতার কবলে পড়ছেন অনেকেই। রাজধানীবাসীর আরেক আতঙ্কের নাম ডায়রিয়া। করোনা মহামারির প্রকোপ কমলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া। প্রতিদিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল।
বস্তুত, দুর্বিষহ জীবন কাটাতে কাটাতে মানুষ খুঁজে মরছেন পরিত্রাণের পথ। দেশে মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ধুম লেগেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে নানা মেগা প্রকল্প। কিন্তু মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে নেমে এসেছে দুর্যোগ। অনেকেই তাই প্রশ্ন করেন-কী হবে এসব মেগা প্রকল্প দিয়ে? জীবনই যদি না বাঁচে, তাহলে এসব প্রকল্পের অর্থ কী? প্রথমত, মানুষের জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে স্বস্তি। খেয়ে-পরে নির্বিঘ্ন জীবন কাটাতে চায় মানুষ, উন্নয়নের গালভরা বুলি শুনতে চায় না। তাই চারদিক বিস্তৃত সংকট থেকে মানুষ কীভাবে মুক্তি পাবে, সে কথাই ভাবতে হবে সরকারের উচ্চমহলকে। অবস্থার উন্নতি ঘটাতে না পারলে দেশে দেখা দিতে পারে বড় ধরনের নৈরাজ্য। সেটা কি সরকারের জন্য খুব ভালো হবে?