Monday, March 27, 2023
spot_img
Homeলাইফস্টাইলনাক বন্ধ মাথাব্যথা ও সর্দি কিসের লক্ষণ, কী করবেন?

নাক বন্ধ মাথাব্যথা ও সর্দি কিসের লক্ষণ, কী করবেন?

ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে অনেকের নাক বন্ধ হয়ে যায়। সঙ্গে মাথাব্যথা ও সর্দি যোগ হয়। ঋতু পরিবর্তনের সময় এই উপসর্গগুলো অনেকেরই দেখা দেয়। এগুলো অনেক ক্ষেত্রে সাইনোসাইটিসের কারণেও হয়। তবে ভয় না পেয়ে, আগেভাগেই কড়া অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে জেনে নিন কী করতে হবে। দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
 
সাইনাসের লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী। 
 
নাকে শরীরের এয়ারকন্ডিশনারের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আমাদের শরীরে বাতাস ঢোকার অন্যতম পথ হলো নাক। নাকের চারপাশের অস্থিগুলোর পাশে বাতাসপূর্ণ কুঠুরি থাকে। এগুলোকে বলে ‘সাইনাস’। সাইনাসের কাজ হলো মাথাকে হালকা রাখা, আঘাত থেকে মাথাকে রক্ষা করা, কণ্ঠস্বরকে সুরেলা রাখা, দাঁত ও চোয়াল গঠনে সহায়তা করা। প্রত্যেকটি সাইনাসই অস্টিয়ামের সাহায্যে নাসিকা গহ্বরের সঙ্গে যুক্ত। সাইনাসের ভেতরের মিউকাস (তরল) স্বাভাবিক নিয়মেই প্রত্যেক দিন নাসিকা গহ্বর দিয়ে বেরিয়ে যায়। নাকের মধ্য দিয়ে সাইনাসে বাতাস চলাচল করে এবং এ প্রক্রিয়ার বিঘ্ন ঘটলে বাতাসের পরিবর্তে সেখানে পানি বা তরল পদার্থ জমা হয়ে প্রদাহ হয়ে থাকে যাকে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় সাইনোসাইটিস।

সাইনোসাইটিস কেন হয়

নাকে এলার্জি সমস্যা থাকলে, ভাইরাসের সংক্রমণ হলে, মৌসুম পরিবর্তনজনিত সাধারণ ঠান্ডা-সর্দি থেকে, নাকের মাঝখানের হাড় বাঁকা হলে, নাকের ভেতরে মাংস (টারবিনেট) বৃদ্ধি হলে, নাকের পলিপ, টিউমার ইত্যাদির কারণে সাইনাসের মধ্যে বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং সেখানে পানি বা তরল পদার্থ জমা হয়ে প্রদাহ হয়ে থাকে। এলার্জি, ঠান্ডা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো সমস্যাগুলো থেকেই শীতের এ সময়ে এ রোগের প্রকোপ তুলনামূলক বেশি দেখা দেয়। এ সময় সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লক্ষণ এবং উপসর্গ

* নাক থেকে ঘন, হলুদ বা সবুজাভ শ্লেষ্মা (সর্দি) বের হয়। সঙ্গে জ্বর হতে পারে।

* নাক বন্ধ এবং নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়।

* নাকে ব্যথা, চোখের নিচে অথবা কপালে ফোলাভাব থাকতে পারে এবং চোখ, গাল, নাক বা কপালের চারপাশে ব্যথা থাকতে পারে।

* কানের ভেতরে চাপ অথবা বন্ধ বন্ধ ভাব অনুভব হতে পারে।

* মাথা ব্যথা থাকতে পারে, দাঁতে ব্যথা হতে পারে, ঘ্রাণশক্তি /গন্ধের অনুভূতি কমে যেতে পারে।

শীতের শুরুতে সতর্ক থাকতে করণীয়

আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় সচেতন হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। গভীর রাতে বাড়ি ফিরতে হলে বা ভোরে বের হলে কান-মাথা-গলা ঢেকে বের হওয়া উচিত। শীত শীত লাগলে পায়ে রাখুন মোজা। শীতে ধুলা থেকে এলার্জি বাড়ে; তাই রাস্তায় বেরোলে রুমাল সঙ্গে রাখুন। নাক চাপা দিন ধুলো-ধোঁয়ায়; প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন। কারও যদি অ্যালার্জি থাকে, সে ক্ষেত্রে জেনে নিতে হবে এলার্জির নির্দিষ্ট কারণ। যাতে সতর্ক হয়ে তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। পাশাপাশি ধূমায়িত এবং দূষিত পরিবেশ পরিত্যাগ করে চলা, ঘুমানোর সময় মাথা উঁচু রাখা (যাতে সাইনাস নিজে থেকেই পরিষ্কার হতে পারে), দীর্ঘক্ষণ পানি ঘাঁটবেন না । আক্রান্ত হলে অ্যারোসোল, মশার কয়েলের ধোঁয়াসহ যে কোনো ধরনের ধোঁয়া ও স্প্রে থেকে দূরে থাকুন।

কীভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়

যে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত। সাইনোসাইটিস রোগটি নির্ণয় করা খুব সহজ। নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীকে ক্লিনিক্যালি দেখার পাশাপাশি একটি X-PNS (OMV) নামক এক্সরে করেই নিশ্চিত হয়ে থাকেন।

করণীয়

এ রকম সমস্যা দেখা দিলে ভাঁপ নেওয়ার সাহায্যে নাক পরিষ্কার করতে পারেন। দিনে দুবার গরম পানির ভেপার নিতে হবে। গরম পানি মেনথলের দানা মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে কুসুম গরম জলের ভেপার (Inhalation) নাক দিয়ে নেওয়া যায়। এতে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস নাক থেকে সহজেই দূর হবে।

এ অসুখে সাধারণত অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খুব কার্যকর। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলা যায়। বাজারে চলতি নাকের ড্রপে সাময়িক আরাম মিললেও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার ভালো নয়, সে ক্ষেত্রে নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যেতে পারে। সমস্যা বেশি দেখা দিলে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক প্রয়োজনবোধে সঠিক মাত্রায় সঠিক এন্টিবায়োটিক এবং ব্যথানাশক দিয়ে থাকেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments