সাধারণভাবে যেকোনো অর্থবহ সুন্দর নাম ও উপনাম গ্রহণে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তবে মহানবী (সা.)-এর নাম ও উপনাম গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছুটা বিধি-নিষেধ রয়েছে। কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, একই ব্যক্তি ‘মুহাম্মদ’ নাম ও ‘আবুল কাসেম’ উপনাম গ্রহণ করতে পারবে না। কেননা এতে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাদৃশ্য তৈরি হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার নামে নাম রাখো কিন্তু আমার উপনাম গ্রহণ কোরো না। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫৩৮)
নবীজি (সা.)-এর নামে নাম রাখা
একাধিক বিশুদ্ধ হাদিসে নবীজি (সা.) তাঁর নামে নাম রাখতে উৎসাহিত করেছেন এবং তাঁর উপনাম গ্রহণে নিরুৎসাহ করেছেন। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, আমাদের মধ্যে এক ব্যক্তির ছেলেসন্তান জন্মাল। সে তার নাম রাখল মুহাম্মদ। তাঁর গোত্রের লোকেরা বলল, আমরা তোমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামে নাম রাখতে দেব না। সেই ব্যক্তি তাঁর ছেলেকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার একটি ছেলে হয়েছে। আমি তাঁর নাম রেখেছি মুহাম্মদ। কিন্তু আমার গোত্রের লোকেরা বলছে, আমরা রাসুলের নামে নামকরণ করতে দেব না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার নামে নাম রাখো; কিন্তু আমার উপনাম গ্রহণ কোরো না। নিশ্চয়ই আমিই কাসেম বা বণ্টনকারী। আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন করি। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৩৩)
অভিনব নাম খোঁজা দোষের নয়
সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে মা-বাবা অভিনব নাম খোঁজেন। এমনটি করা দোষের নয়। কেননা ইয়াহইয়া (আ.)-এর নামকরণের ক্ষেত্রে আল্লাহ বলেন, ‘হে জাকারিয়া, আমি (আল্লাহ) তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহইয়া। এই নামে এর আগে আমি কারো নামকরণ করিনি। ’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৭)
সন্তানের সঙ্গে মিলিয়ে সম্বোধন করা
সমাজে সাধারণত প্রথম সন্তানের দিকেই তার মা-বাবাকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়। যেমন প্রথম সন্তানের নাম আবদুল্লাহ হলে তার মাকে আবদুল্লাহর মা এবং বাবাকে আবদুল্লাহর বাবা বলা। সমাজের প্রচলিত এ রীতি ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে অনুমোদিত। বরং এটি একটি আবরীয় মুসলিম সংস্কৃতি। ‘আবদুল্লাহর মা’-এর আরবি ‘উম্মে আবদুল্লাহ’ আর ‘আবদুল্লাহর বাবা’-এর আরবি ‘আবু আবদুল্লাহ’। ইসলামী পরিভাষায় সন্তানের সঙ্গে মিলিয়ে মা-বাবাকে সম্বোধন করাকে কুনিয়াত বা উপনাম ধারণ বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর সন্তান কাসেমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ‘আবুল কাসেম’ বলা হয়।
উপাধি প্রদান
মানুষের ভালো গুণাবলির ভিত্তিতে কাউকে উপাধি প্রদান করা নিন্দনীয় নয়। নবীজি (সা.) একাধিক সাহাবিকে উপাধি প্রদান করেছিলেন। যেমন আবু বকর (রা.)-এর উপাধি ছিল সিদ্দিক (সত্যবাদী), ওমর (রা.)-এর উপাধি ছিল ফারুক (সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী) এবং খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)-এর উপাধি ছিল সাইফুল্লাহ (আল্লাহর তলোয়ার)। তবে কাউকে মন্দ উপাধি দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। যারা তাওবা করে না তারাই অবিচারকারী। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১১)