রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহ সমগ্র পৃথিবীর নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। কেননা তিনি ছিলেন শেষ নবী। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ জানে না।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ২৮)
তিনি বিশ্বনবী হওয়ায় তাঁর দরবারে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ উপস্থিত করেছিলেন। যারা মূলত বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন এমন কয়েকজন অনারব সাহাবির পরিচয় তুলে ধরা হলো।
১. উম্মে আইমান বাকরাহ (রা.) : মহানবী (সা.)-এর অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন উম্মে আইমান (রা.)। নবীজি (সা.) তাঁর কাছে লালিত-পালিত হন এবং তিনি তাঁকে মায়ের মতো সম্মান করতেন। মা অথবা বাবার কাছ থেকে নবীজি (সা.) উম্মে আইমান (রা.)-এর মালিকানা লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁকে আজাদ করে দেন। নিজের পালকপুত্র জায়েদ বিন হারিসা (রা.)-এর সঙ্গে তিনি তাঁর বিয়ে দেন এবং তাদের ঔরসে উসামা বিন জায়েদ (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন হাবশার অধিবাসী।
২. বেলাল বিন রাবাহ (রা.) : হাবশার অধিবাসী হওয়ায় তাঁকে বেলাল হাবশিও বলা হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর মনিব উমাইয়া বিন খালাফ তাঁর ওপর অকথ্য নির্যাতন করত। অবশেষে আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তাঁকে কিনে আজাদ করে দেন।
৩. ওয়াহশি বিন হারব (রা.) : তিনিও দাস ছিলেন। মক্কা বিজয়ের পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। মিথ্যা নবুয়তের দাবিদার মুসাইলামাতুল কাজ্জাবকে তিনি হত্যা করেন।
৪. আদ্দাস (রা.) : তিনি ছিলেন একজন সিরীয় খ্রিস্টান দাস। নবী করিম (সা.) তায়েফ থেকে ফেরার পথে এক বাগানে বিশ্রাম করছিলেন। তখন তিনি মহানবী (সা.)-এর পরিচয় জানতে পেরে ইসলাম গ্রহণ করেন।
৫. মারিয়া কিবতিয়া (রা.) : তিনি মিসরের কিবতি পরিবারের সদস্য ছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন মিসরের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। মিসরের শাসক মুকাওকিস তাঁকে নবীজি (সা.)-এর কাছে উপহার হিসেবে পাঠান। তাঁর গর্ভে নবীজি (সা.)-এর পুত্র ইবরাহিমের জন্ম হয়।
৬. শিরিন বিনতে শামউন (রা.) : তিনি ছিলেন মারিয়া কিবতিয়া (রা.)-এর বোন ও হাসসান বিন সাবিত (রা.)-এর স্ত্রী। নবীজি (সা.)-এর পক্ষ থেকে তিনি শিরিন (রা.)-কে উপহার হিসেবে লাভ করেছিলেন।
৭. জাবান আবু মাইমুন (রা.) : তিনি ছিলেন কুর্দি বংশোদ্ভূত। কুর্দিদের মধ্যে জাবান আবু মাইনুন (রা.) ছাড়া কোনো সাহাবির নাম জানা যায় না। তিনি মহানবী (সা.) থেকে একাধিক হাদিস বর্ণনা করেছেন।
৮. সুহাইব রুমি (রা.) : তিনি ছিলেন রোমের শাসনাধীন আরব অঞ্চলের অধিবাসী। এ জন্য তাকে ‘রুমি’ বলা হয়। প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন সুহাইব রুমি (রা.)। ইসলাম গ্রহণ করায় তাঁকে অকথ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে তিনি সব যুদ্ধে অংশ নেন।
৯. আরজাক বিন উকবা (রা.) : তিনিও রোমের অধিবাসী ছিলেন। হারিস বিন কালাদার এই দাস পেশায় কামার ছিলেন। তায়েফ অবরোধের সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। নবীজি (সা.) তাঁকে মুক্ত করে দেন।
১০. সালিম (রা.) : সালিম (রা.) ছিলেন পারসিক বংশোদ্ভূত। তিনি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ‘রিদ্দা’ তথা ধর্মদ্রোহিতাবিরোধী যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। ইয়ামামার যুদ্ধে কোরআনের হাফেজ এই সাহাবি শহীদ হন।
১১. সালমান ফারেসি (রা.) : ঐতিহাসিকদের বর্ণনামতে, তিনি ছিলেন পারস্যের কোনো এক ভূস্বামীর ছেলে। সত্যের সন্ধানে ঘর ছাড়েন। ঐতিহাসিক খন্দকের যুদ্ধে তাঁর পরামর্শেই খন্দক বা পরিখা খনন করা হয়। মহানবী (সা.) থেকে তিনি বহুসংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেন।
১২. ফিরোজ দাইলামি (রা.) : তিনি ছিলেন ইয়ামেনে পারসিক শাসক পরিবারের সদস্য। তিনি আবু আবদুল্লাহ বা আবু আবদুর রহমান নামে পরিচিত ছিলেন। মিথ্যা নবুয়তের দাবিদার আসওয়াদ আনাসিকে তিনি হত্যা করেন। বলা হয়, তিনি বাদশাহ নাজ্জাসির বোনের ছেলে।
এ ছাড়া আরো কয়েকজন ব্যক্তির ব্যাপারে দাবি করা হয়, তারা মহানবী (সা.)-এর সাহাবি। তবে নিশ্চিত হওয়ার মতো ঐতিহাসিক দলিল-প্রমাণ পাওয়া যায় না। যেমন ভারতের চেরামান পারুমাল, আফগানিস্তানের পশতু ভাষী কায়েস আবদুর রশিদ, কোমোরস দ্বীপপুঞ্জের ফে বেদজা মুয়াম্বা ও মুতসাওয়া মুয়ান্দাজ প্রমুখ। আল্লাহ তাদের কবর শীতল করুন। আমিন
তথ্যসূত্র : মারেফা ডটঅর্গ, উইকিপিডিয়া ও মাউদু ডটকম