বিদ্যমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে চলতি বছর দেশের সার্বিক অর্থনীতির কমপক্ষে ১১ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে নতুন সরকারকে। এর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে ডলার সংকট মোকাবিলা।
বস্তুত এ সংকট থেকেই অন্য চ্যালেঞ্জগুলোর উদ্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রয়েছে-টাকার অবমূল্যায়ন রোধ করা, মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষয় রোধ করা। এছাড়াও ব্যাপক আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে শিল্প খাতের সংকট, বাজারে টাকার প্রবাহ হ্রাস, ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা, নতুন কর্মসংস্থানের গতি হ্রাস, রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যাংক খাতকে সবল ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
বস্তুত এসব চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনি ইশতেহারে বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছে। একই সঙ্গে গণতন্ত্রচর্চার পরিধি বাড়ানো ও বৈষম্য কমানোর কথাও সেখানে বলা হয়েছে। এসব লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। নতুন সরকার এসব চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এদিকে শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সরকারকে মূলত রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তার মতে, এই তিনটি খাতে বিশ্ব সংকটের যে বাস্তবতা, তার প্রতিক্রিয়া থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করা অত সহজ কাজ নয়। তিনি অবশ্য এটাও বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক লিডারশিপের কারণে যেভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে, একইভাবে তার দক্ষতা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে পূরণ করার ওপরই নির্ভর করবে নতুন সরকারের সাফল্য। নবগঠিত মন্ত্রিসভায় যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের যোগ্যতা-দক্ষতার বিষয়টিও এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতের মন্ত্রিসভার কর্মকাণ্ড ও সাফল্য-ব্যর্থতা বিবেচনায় সবাই যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, এমনটা বলা যাবে না; যার ফলে নতুন মন্ত্রিসভা সম্পর্কে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটাও লক্ষণীয়, বিগত মন্ত্রিসভার ২৮ সদস্যই নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি। তাদের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থ, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও রয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, বিগত সরকারে যেসব মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে, সেসব মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন বাদ পড়েছেন। তবে এটাও ঠিক, বিগত সরকারের সময় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে জনমনে, এমন কেউ কেউ নতুন মন্ত্রিসভায় রয়ে গেছেন। ফলে নতুন সরকার দুর্নীতি কমাতে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে ব্যক্তির রদবদলের চেয়েও সরকারের সাফল্য অনেক বেশি নির্ভর করে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর। সংসদে বিরোধী দল এবং সংসদের বাইরে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। নির্বাচনের পর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই পুরোনো দৃষ্টিভঙ্গি পালটে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশা।