Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeধর্মধর্মীয় বিষয়ে প্রশ্ন করার শিষ্টাচার

ধর্মীয় বিষয়ে প্রশ্ন করার শিষ্টাচার

জ্ঞানার্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো প্রশ্ন করা। মনের কৌতূহল ও প্রশ্ন মানুষকে অজস্র অজ্ঞাত বিষয়কে জানার সুযোগ করে দিয়েছে এবং পারস্পরিক প্রশ্ন মানবসমাজের জ্ঞানের বিস্তার ঘটিয়েছে। ইসলাম মানুষকে জ্ঞানার্জনের জন্য প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করে। ফকিহ আলেমরা বলেন, জ্ঞানার্জনের জন্য প্রশ্ন করা মুস্তাহাব।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞাসা করো যদি না জানো। ’

(সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৩)

বলা হয়, উত্তম প্রশ্ন জ্ঞানের অর্ধেক। অর্থাত্ মানুষের বিচক্ষণ ও মাধুর্যপূর্ণ প্রশ্ন তার জ্ঞানার্জনের পথ উন্মুক্ত করে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো কিভাবে আপনি ইলম অর্জন করলেন? তিনি বলেন, ‘প্রশ্নকারী জবান, বিবেকসম্পন্ন অন্তর ও ক্লান্তিহীন শরীর দিয়ে। ’ (কিতাবুল ইলম : ১/৪৬)

প্রশ্ন করার শিষ্টাচারগুলো : ধর্মীয় বিষয়ে জানতে যখন প্রশ্ন করা হয়, তখন কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখা আবশ্যক। যেমন—

উত্তরদাতার প্রতি সম্মান : ধর্মীয় বিষয়ে যিনি উত্তর দেন তাকে মর্যাদাপূর্ণ আসন দান করতে হবে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবিদের মধ্যে বসতেন। কোনো বিদেশি এলে সে চিনতে পারত না কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল? অতঃপর আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অনুমতি চাইলাম যে, আমরা আপনার জন্য এমন একটি আসন তৈরি করি যেন বিদেশি কেউ এলে আপনাকে চিনতে পারে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তাঁর জন্য একটি মাটির আসন তৈরি করেছিলাম, যার ওপর তিনি বসতেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪৯৯১; ফাতহুল বারি : ১/১১৬)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) উল্লিখিত হাদিসের আলোকে বলেন, ‘শিক্ষা বা এ জাতীয় প্রয়োজনে আলেমের জন্য নির্ধারিত ও উঁচুস্থানে বসা মুস্তাহাব। (ফাতহুল বারি : ১/১১৬)

সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ রাখা : মনীষীরা বলেন, কোনো বৈঠকে প্রশ্ন করা হলে এমন প্রশ্নই করা উচিত, যা দ্বারা সবাই উপকৃত হয়। তাঁরা বলেন, যে ব্যক্তি কোনো জ্ঞানের মজলিসে উপস্থিত হয় এবং যদি সে দেখে উপস্থিত মানুষের জন্য কোনো বিধান জানা প্রয়োজন অথচ সে সম্পর্কে কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি। তখন সে বিষয়ে তারই প্রশ্ন করা উচিত যদিও বিষয়টি তার জানা থাকে। যেন সবাই উপকৃত হতে পারে। ঠিক যেভাবে জিবরাঈল (আ.) রাসুল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন এবং নবীজি (সা.) তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছিলেন, জিবরাঈল তোমাদের কাছে এসেছিল তোমাদেরকে দ্বিন শেখাতে। (আত-তারবিয়্যাতু মিনাল হাদিস : ১/৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১)

নম্র হয়ে প্রশ্ন করা : মহল্লার ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক বা সাধারণ কোনো আলেমের কাছে প্রশ্ন করলেও ব্যক্তির উচিত নম্রতার সঙ্গে প্রশ্ন করা। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, প্রশ্নকারীর উচিত তার শিক্ষকের সামনে আদব রক্ষা করা এবং নম্র হয়ে প্রশ্ন করা। প্রমাণ হিসেবে তিনি নিম্নোক্ত হাদিসটি পেশ করেন। তা হলো, ইয়াহিয়া বিন ইয়ামার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি নিকটবর্তী হব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন এবং দাঁড়ালেন। আমরা তাঁর প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মান প্রদর্শনে আশ্চর্যান্বিত হলাম। (আত-তারবিয়্যাতু মিনাল হাদিস : ১/৯)

অনর্থক প্রশ্ন না করা : কোনো দ্বিনের ব্যাপারে অনর্থক ও অর্থহীন প্রশ্ন নিন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি তোমাদেরকে যে বিষয়ে নিষেধ করেছি তা থেকে বিরত থাকো এবং যে বিষয় আদেশ করেছি তা তোমাদের সাধ্যমতো পালন করো। নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ধ্বংস হয়েছে তাদের বেশি বেশি প্রশ্ন করা ও তাদের নবীগণের সঙ্গে মতবিরোধ করার কারণে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৩৮৮)

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments