Friday, September 29, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামদ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া

দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া

অব্যাহত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, তখন উপর্যুপরি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। উদ্বেগের বিষয় হলো, এ পরিস্থিতিতেও বাজার তদারকি কর্তৃপক্ষের তৎপরতা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। সাধারণত ধানকাটার মৌসুমে চালের দাম কমতে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ধানকাটার মৌসুমেও চালের দামে অস্থিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এবার আমনের উৎপাদন বাড়লেও বাজারে চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। চালের উৎপাদিত খরচ থেকে ভোক্তা পর্যায়ের দামের পার্থক্য কেন এত বেশি, তাও একটি প্রশ্ন। বর্তমানে চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীরা যতটা মুনাফা করছেন, তা অস্বাভাবিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। চালের দাম বেশি থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন নিম্ন-আয়ের মানুষ। চিনি নিয়ে বেশকিছু দিন ধরে বড় ধরনের কারসাজি চলছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সুপারশপগুলোয় আমদানীকৃত চিনি পাওয়া গেলেও বাজারে দেশি চিনি না থাকার বিষয়ে কেউ সদুত্তর দিতে পারেনি। ডলার সংকটের এ সময়েও দেশি চিনি নিয়ে এমন কারসাজির বিষয়টি দুঃখজন। জানা যায়, গত ছয় মাসে দেশে যে পরিমাণ মসুর ডাল আমদানি করা হয়েছে, তা ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। এত আমদানির পরও বাজারে এ পণ্যটির দাম বৃদ্ধির বিষয়টি রহস্যজনক।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও রামজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সেসব পণ্যের দাম গত কয়েক মাস আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী। বলা যায়, এসব নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশ ছুঁয়েছে। নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। রমজানের পণ্য আমদানিতে যাতে কোনোরকম সমস্যা না হয়, সেজন্য সরকার আমদানিকারকদের নানা সুযোগ করে দিয়েছে। এতে আমদানিকারকরা উপকৃত হলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব দৃশ্যমান নয়। প্রশ্ন হলো, ভোক্তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে আর কতদিন জিম্মি থাকবেন? সরকারকে অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা মানুষ খাদ্য তালিকা থেকে পুষ্টিকর খাবার বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ পুষ্টিহীনতার শিকার হবেন। এতে দেশে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে, তা দিয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কতটা কঠিন হবে, তা সহজেই অনুমেয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে অল্প সময়ের ব্যবধানে আমদানিনির্ভরতা কমানোর কাজটি কঠিন। বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ আরও বিভিন্ন কারণে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কাজেই জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর আমদানিনির্ভরতা ধাপে ধাপে কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভবিষ্যতে পণ্যের বিশ্ববাজার পরিস্থিতি যতই স্বাভাবিক হয়ে আসুক না কেন এবং দেশে উৎপাদন যতই বৃদ্ধি পাক না কেন, বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা না থাকলে ভোক্তাদের দুর্বিষহ কষ্টের অবসান হবে না। যেহেতু বাজার তদারকি সংস্থার কোনো কোনা সদস্যের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগসাজশের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, সেহেতু এক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূলে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments