একজন দ্বিন প্রচারক হিসেবে মানুষের সামনে দ্বিন ও তার সত্যতা তুলে ধরতে হবে। ইসলামের শাশ্বত শিক্ষা ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে হবে। অনেক মানুষের সামনে সত্য ধর্মের আলো অনুদ্ঘাটিত থেকে যায়। বিশেষ করে যারা কোনো দল ও মতের অন্ধ অনুসারী, তারা হক ও সত্যের দেখা পায় না।
নিজের মত ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোনো কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে না। কাজেই বিরোধপূর্ণ জায়গাগুলোতে হিকমতপূর্ণ পন্থায় অগ্রসর হতে হবে। বিরোধ উসকে দিয়ে সমাজে দ্বিন প্রতিষ্ঠা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
দাওয়াতি কাজে দ্বিন প্রচারকদের পারস্পরিক সহযোগিতা করা দাওয়াতের একটি আবশ্যিক করণীয়। কোনো দ্বিন প্রচারক যেন ‘একলা চলো’ নীতি অবলম্বন না করেন। শুধু তাঁর কথাই লোকেরা মানবে, তাঁর কথাই সবার আগে থাকবে, এমন চিন্তা যেন তাঁকে পেয়ে না বসে। বরং দাওয়াত কবুল হওয়াই হবে দাঈদের একমাত্র চিন্তা।
এটা ঠিক যে মানুষ তার হাত দিয়ে কল্যাণ সাধনকে ভালোবাসে। কিন্তু অন্যের হাত দিয়ে কল্যাণ হওয়াকে অপছন্দ করা তার জন্য উচিত নয়। বরং তার জন্য আল্লাহর দ্বিন সমুন্নত হওয়াই বড় কথা। কার হাত দিয়ে তা সমুন্নত হলো, তা বড় কথা নয়।
দ্বিনের বৃহত্তর স্বার্থে দ্বিন প্রচারকরা সবাই মিলে একজোট হবেন—এটা ইসলামের শাশ্বত শিক্ষা। এটা সময়ের দাবি। তাঁরা একে অন্যকে সাহায্য করবেন, সহযোগিতা করবেন, পরস্পরে শলাপরামর্শ করবেন—এটা অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসনে সহায়ক। সবাই এক পথের পথিক হবেন। আল্লাহর পথে দুজন দুজন, তিনজন তিনজন এবং চারজন চারজন করে দাঁড়িয়ে যাবেন। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বলো, আমি তোমাদের একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি, তা এই যে তোমরা আল্লাহর জন্য দু-দুজন বা এক-একজন করে দাঁড়িয়ে যাও…। ’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৪৬)
আমরা তো দেখি অকল্যাণ ও খারাপ পথের দাওয়াতদাতারা সবাই একাট্টা, একজোট ও একমত। সেখানে আল্লাহর পথের দাঈরা কেন ঐক্যের এ আমলে আগুয়ান হবেন না? দাওয়াতের পথে কে কোথায় বিদ্যা-বুদ্ধিতে ভুল করছেন, দাওয়াতের পদ্ধতিতে ত্রুটি করছেন, কেন তাঁরা ভালোবেসে একে অপরকে বলবেন না? আমরা যখন কোরআন ও সুন্নাহর বাণীর দিকে তাকাই, তখন আমরা তো দেখি আল্লাহ তাআলা মুমিনদের এমন সব গুণ তুলে ধরেছেন, যাতে প্রতীয়মান হয় তারা একতাবদ্ধ এবং একে অন্যকে সাহায্যকারী। আল্লাহ বলেন, ‘আর মুমিন পুরুষ ও নারীরা পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজে নিষেধ করে। তারা সালাত কায়েম করে ও জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭১)
পবিত্র কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের মধ্যে একটা দল থাকা আবশ্যক, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। আসলে তারাই সফলকাম। তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং স্পষ্ট প্রমাণাদি এসে যাওয়ার পরও তাতে মতভেদ করেছে। এদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর শাস্তি। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪-১০৫)
সহযোগিতা না করে হিংসা-বিদ্বেষের কুফল
শয়তান চায়—একজন দ্বিন প্রচারক তার মতো আরেকজন দ্বিন প্রচারককে দাওয়াতের ময়দানে সফল হতে দেখে হিংসাকাতর হোক।
প্রিয় ভাইয়েরা, যারা মন্দ ও খারাপ কাজের দাওয়াত দেয় ওরা তো ভালো ও কল্যাণমুখী কাজের দাঈদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদই চায়। ওরা জানে, মঙ্গল পথের দাঈদের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা তাদের জন্য সফলতা বয়ে আনবে। পক্ষান্তরে অনৈক্য ও অসহযোগিতা তাদের ব্যর্থতা ও অসফলতা নিশ্চিত করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। আপোষে ঝগড়া করো না। তাহলে তোমরা শক্তিহীন হবে ও তোমাদের প্রতিপত্তি উবে যাবে। তোমরা ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪৬)
সন্দেহ নেই যে আমাদের প্রত্যেকেই ভুলভ্রান্তির আওতাভুক্ত। সুতরাং আমরা যখন আমাদের কারো থেকে ভুল কোনো কিছু হতে দেখব, তখন আমাদের কর্তব্য হবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুল শুধরে দেওয়া, কোথায় কিভাবে ভুল হচ্ছে তা বুঝিয়ে দেওয়া। অনেক সময় এমনও হতে পারে যে আমাদের ধারণায় কাজটা ভুল, কিন্তু বাস্তবে তা ভুল নয়। তখন সেই ভাইটাই আমাদের ধারণায় যে ভুল হয়েছে তা বুঝিয়ে দেবেন। কারো ভুলের দরুন তাকে নিন্দা-মন্দ করা, তার প্রতি ঘৃণা ছড়ানো যেখানে কোনো মুমিনের জন্যই শোভনীয় হতে পারে না, সেখানে আল্লাহর পথের একজন দাঈর জন্য তো তা মোটেও সমীচীন হতে পারে না।