দেশে প্রতি ১১৭.২৮ জনের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র একজনের। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর থেকে গতকাল ১৭ আগস্ট (সোমবার) পর্যন্ত মোট করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ১৮৯ জনের। ১৬ কোটি মানুষের দেশে এই হিসাবে প্রতি ১১৭.২৮ জন মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে মাত্র একজনকে। আবার গতকাল পর্যন্ত সরকারি হিসেবে সারা দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই লাখ ৭৯ হাজার ১৪ জনের। এই হিসাবে প্রতি ৫৭৩.১৮ জন মানুষের মধ্যে একজন করোনায় আক্রান্ত পাওয়া গেছে।
এ দিকে বাংলাদেশে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার করোনা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ছে না। এই দু’টির মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যা অনুপাতে দৈনিক কম করে হলেও ৫০ হাজার করোনা পরীক্ষা করা উচিত। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকে দেখা যাচ্ছে করোনা পরীক্ষা বাড়ছে না। আবার দেখা যাচ্ছে হাসপাতালে বা করোনা পরীক্ষার বুথে এসে পরীক্ষা করাতে চাইলেও নমুনা সংগ্রহ না করেই মানুষকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
তাহলে প্রশ্ন আসছে যে বাংলাদেশ কি করোনামুক্ত হওয়ার পথে অথবা খুব শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে করোনাভাইরাস নির্মূল হয়ে যাচ্ছে?
এ প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক বলেন, ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত করোনা নির্মূল হচ্ছে না। বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনুপাতে এখানে কম করে হলেও দৈনিক এক লাখ করোনা মানুষের করোনা পরীক্ষা করা উচিত। কিন্তু তা হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু দৈনিক ৫০ হাজার টেস্ট করার ক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। কারণ এরই মধ্যে বাংলাদেশে ৮৭টি আরটি পিসিআর মেশিন বসানো হয়েছে। এই ৮৭টি মেশিনকেই বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু বিপরীত দিকে আমরা হতাশাজনক একটি চিত্র দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজারের বেশি করোনা পরীক্ষা করছি না।
প্রতিটি আরটি পিসিআর মেশিন কমপক্ষে ৫০০ পরীক্ষা দৈনিক করতে পারলে এই ৮৭টি মেশিন থেকে বাংলাদেশ দৈনিক ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষের টেস্ট করতে পারবে। আবার কোনো কোনো পরীক্ষা কেন্দ্র একাই দৈনিক দুই হাজারের বেশি পরীক্ষা করার ক্ষমতা রাখে। যেমন শেরেবাংলা নগরের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার’ গতকাল সোমবার একাই দুই হাজার ৩৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করেছে এবং এ সেন্টারটির আরো বেশি পরীক্ষা করার ক্ষমতা আছে। এভাবে বাংলাদেশ ইচ্ছা করলেই প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা করাতে পারে। যত বেশি পরীক্ষা করা হবে তত বেশি মানুষকে শনাক্ত করা যাবে এবং তাদের আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিনে রেখে তাদের থেকে অন্যদের নিরাপদ রাখা যায়। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত বেশি করে করোনা টেস্টের বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলোÑ বাংলাদেশে এখন সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষার হার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।
পরীক্ষার হার কমে যাওয়ার পেছনে অবশ্য সরকারের একটি যুক্তি রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, রাজধানীতে মানুষ নিজের ইচ্ছায় করোনা পরীক্ষা করাতে এলেও গ্রামের মানুষ আসছেন না। তারা পরীক্ষা করাতে চাচ্ছেন না। সে কারণে মোট পরীক্ষার হার কমে গেছে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, করোনা উপসর্গ রয়েছে এমন প্রতিটি মানুষকে বাধ্যতামূলক পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। যত বেশি পরীক্ষার আওতায় আনা যাবে রোগটিকে যত বেশি নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা যাবে। রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সচল করা যাবে না। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার স্বার্থেই সরকারকে নিজ উদ্যোগে পরীক্ষার হার না কমিয়ে বরং বাড়াতে হবে এবং এরপর ভ্যাকসিন নিয়ে আসার সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে।