Thursday, June 8, 2023
spot_img

দেনা

শিকদার নূরুল মোমেন

আমার দিকের আত্মীয় আমির চাচার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে সপরিবারে গ্রামে এসেছি। বিয়ে বাড়িতে শিশুরা আনন্দ আর হইচইয়ে মেতে আছে। বয়স্করা নানা ব্যস্ততায় সময় কাটাচ্ছেন। সব কিছুই ভালোভাবে চলছে। হঠাৎ সবার ব্যস্ততা যেন থেমে গেল। আমি ও আমার স্ত্রী সোহানা অন্য আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। সেই নীরবতা হট্টগোলে পরিণত হলো। পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশদ জানতে আমি উঠে দাঁড়ালাম।

বরের বড় ভাইয়ের উচ্চকণ্ঠ শোনা গেল, ‘কোনো পাওনা বাকি রেখে এই বিয়ে হবে না।’ কনেপক্ষের মুরব্বিরা বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই অল্প কয়টা টাকার জন্য বিয়েটা ভেঙে দিয়েন না। এখন বিয়ে-শাদি হয়ে যাক, দেনা পরিশোধ করেই মেয়েকে আমরা ফিরানিতে আনতে যাবো।

এত অনুরোধের পরও পাত্রপক্ষের মন নরম হয় না। আমিও দুই-এক কথা বলে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সফল হলাম না। ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলাম। আমার কাছে সোহানা বিস্তারিত জানতে চাইল। আমি রাগ দমন করতে পারছি না, ‘ছেলেপক্ষ পুরাই খাটাশ। দশ হাজার টাকার জন্য পুরো আয়োজনটা মাটি করে দিতে চাচ্ছে। বরও কিছু বলছে না! তার মতামত ছাড়া তো নিশ্চয় মুরব্বিরা এমন আচরণ করছে না! এমন ছেলের সঙ্গে মেয়েটা সংসার করবে কীভাবে!’
সোহানা আমার দিকে বিষণ্ন চোখে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণের নীরব শ্রোতা মুচকি হেসে নিচু স্বরে বলে, ‘কেন আমি পনোরো বছর ধরে করছি না!’

সোহানা আমার পাশ থেকে উঠে জটলার দিকে এগিয়ে গেল। আমির চাচাকে ডেকে আড়ালে নিয়ে যায়। তার হাতে দশ হাজার টাকা দেয়, ‘চাচা, টাকাগুলো আপনাকে ঋণ হিসেবে দিচ্ছি না। এই মুহূর্তের এক অসহায় বাবা ও মেয়ের চোখের জল মুছতেই কাজটি আমি করছি। ধরে নিন, এক বোনের জন্য আরেক বোনের উপহার।’

ভালোভাবেই বিয়ের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। একটি মেয়ে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে যায়। এবার আমাদের বাসায় ফেরার পালা। আমি লজ্জায় সোহানার দিকে তাকাতে পারছি না। পনেরো বছর আগে এই আমির চাচা আমাদের বিয়েতে আজকের বরপক্ষের চরিত্র চিত্রায়ন করেছিলেন। আমি আমার দশ বছর বয়সী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ভাবি, ‘আমার সাথেও যদি এমনটি হয়!’

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments