আমাদের শরীরের স্পর্শকাতর ও অত্যন্ত মূল্যবান একটি অঙ্গ হলো চোখ। তাই সেই চোখের যত্ন নেওয়া দরকার। কিছু অভ্যাসের কারণে চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে ফেলছি।
কারণ
♦ বেশির ভাগ মানুষ ইলেকট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান, যা কিনা চোখের জ্যোতি কমার অন্যতম কারণ।
♦ বিশেষ করে রাতে আলো নিভিয়ে চোখের কাছে মোবাইল ফোন রেখে তাতে সিনেমা দেখা বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট কেড়ে নিচ্ছে চোখের দৃষ্টি।
♦ ধূমপানে আসক্তি, কেবল হার্ট নয়, চোখের জন্যও ক্ষতিকর। সিগারেটের ধোঁয়া ক্যাটারাক্ট তো বটেই, বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশনকেও (রেটিনার অসুখ) ত্বরান্বিত করে।
প্রতিরোধ
♦ চোখের জ্যোতি বাড়াতে ভিটামিন ‘এ’ জাতীয় খাবার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মিষ্টি পেঁপে, কাঁঠাল, কুমড়া, কালো কচুশাক, হেলেঞ্চাশাক, পুঁইশাক, লাউশাক, ধনেপাতা, পাটশাক, গাজর, মিষ্টি আলু, ডিম, কলিজা, মলাঢেলা ছোট্ট মাছজাতীয় খাবারে চোখের জ্যোতি বাড়ে।
♦ চোখকে ধূলিকণা থেকে বাঁচাতে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে সব সময় চোখকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
♦ মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টিভির ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মি থেকে যতটা সম্ভব চোখকে দূরে রাখুন।
♦ সুগার, প্রক্রিয়াজাত ময়দা, ট্রান্সফ্যাট (বনস্পতি) ও ধূমপান পরিহার করা উচিত।
♦ চোখে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পুনরায় আগের মতো দৃষ্টিশক্তি ফেরত না পেলেও কিছু ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে দৃষ্টিশক্তি আবার বাড়িয়ে দিতে পারেন। চোখের বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম আছে, যেগুলো আপনি নিয়মিত করতে পারেন।
যেসব খাদ্য দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
♦ আপনার চোখ সুস্থ রাখতে খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এবং খনিজ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, জিংক আপনার চোখের জন্য অপরিহার্য। এই ভিটামিন এবং খনিজসমৃদ্ধ খাবার খান; যেমন—গাজর, পালংশাক, ব্রকোলি, স্ট্রবেরি, মিষ্টি আলু।
♦ চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, বিটা ক্যারোটিন ও লিউটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড প্রধানত আসে মাছ থেকে। এ ছাড়া ফ্লাক্স সিডস, ওয়ালনাটস, পেশতা ও বাঁধাকপিতে পাওয়া যায় এ ধরনের চর্বি। আর বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় গাজর এবং সবুজ শাক-সবজি, ফলমূলে। লিউটিন পাওয়া যায় ডিমের সাদা অংশে। চোখের জ্যোতি বাড়াতে এই লিউটিন সহায়ক।
আছে চোখের ব্যায়ামও
♦ কয়েক মিনিট হাতের তালুটা চোখের ওপর রাখুন! তবে চোখের ওপর চাপ দেবেন না যেন! এমনটা কয়েক মিনিট করে রাখলেই দেখবেন মন এবং চোখের স্ট্রেস কমতে থাকবে। সেই সঙ্গে চোখের ক্লান্তিও দূর হবে। আর চাখের ক্লান্তি দূর হলে চোখের কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমবে, তেমনি দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
♦ কথায় কথায় চোখ পিটপিট করতে ভুলবেন না যেন! বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা যেকোনো ডিজিটাল স্ক্রিনে কাজ করার সময় আমাদের চোখের পাতা একেবারেই পড়তে চায় না। ফলে চোখের ওপর চাপ বাড়তে শুরু করে। সে কারণেই যারা দিনের বেশির ভাগ সময় কম্পিউটারে কাজে করেন, তাঁদের কিছু সময় পর পর চোখ পিটপিট করা যায়। এমনটা করলে চোখের ক্লান্তি দূর তো হয়ই, সেই সঙ্গে চুলকানি এবং ড্রাই আইয়ের মতো সমস্যাও দূর হয়। কম করে ৫ সেকেন্ড যদি এমনটা করা যায়, তাহলে চোখের উপকার পাওয়া যাবে।
♦ বলের মতো ঘোরাতে থাকলে চোখের মণির বয়স বাড়লেও চোখ তরতাজা থাকবে। দিনের মধ্যে কম করে ২ মিনিট খরচ তো করতেই হবে! প্রথমে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং তারপর ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চোখের মণিকে ঘোরাতে হবে। তবে পুরো ব্যায়ামটা খুব ধীরে ধীরে করবেন। এমনটা প্রতিদিন ২-৩ মিনিট করলেই দেখবেন দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে মনোযোগও বৃদ্ধি পাবে।
♦ ঠাণ্ডা-গরম পানিতে সেঁক দিতে ভুলবেন না। একটা বাটিতে গরম পানি আর একটা বাটিতে ঠাণ্ডা পানি নিন। তারপর একটা তোয়ালে গরম পানিতে ডুবিয়ে কিছু সময় চোখের ওপর রাখুন। তারপর পানি দিয়ে একইভাবে চোখে সেঁক দিন। এমনটা কয়েক মিনিট করলে সারা দিন ধরে কাজ করতে করতে চোখের যে ক্ষতি হয়েছে, তা ঠিক হতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে ক্লান্তি দূর হবে এবং দৃষ্টিশক্তিরও উন্নতি ঘটবে।
♦ ফোকাস শিফটিং এক্সারসাইজ—চোখের পেশির ক্ষমতা বাড়াতে এই ব্যায়ামটা দারুণ কাজে আসে। এ ক্ষেত্রে চোখের একেবারে সামনে যে বস্তুটা আছে, সেটার দিকে তাকান। ৫ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার পর তার থেকে একটু দূরে রয়েছে এমন কিছুর দিকে একদৃষ্টিতে পুনরায় ৫ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন। এমনটা করতে থাকলে চোখের পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টিশক্তিও বাড়তে শুরু করে।
লেখক : কনসালট্যান্ট, বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ঢাকা