মানবজীবনে জাগতিক, সাংসারিক কর্মকাণ্ড, ব্যস্ততা ও চিন্তাভাবনা থাকবেই। আল্লাহ মানুষকে এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তবে এই ব্যস্ততা ও কর্ম নিজের, পরিবারের ও সমাজের সবার পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বাঁচার ও পারলৌকিক জীবনে মুক্তি ও আল্লাহর সান্নিধ্যে অফুরন্ত নিয়ামত লাভের জন্য। কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত ও বরকত অর্জন করে নিজে বাঁচতে হবে এবং অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করতে হবে।
কিন্তু শয়তানি প্ররোচনা ও মানবীয় দুর্বলতার কারণে আমরা সৃষ্টি ও কর্মের উদ্দেশ্যের একেবারে বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করি। আমরা স্বার্থপর হয়ে যাই এবং নিজের অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ স্বার্থরক্ষার জন্য অন্যদের অকল্যাণ, ক্ষতি বা ধ্বংস কামনা করি বা সে জন্য চেষ্টা করি। এভাবে আমরা মূলত নিজেদেরও ধ্বংস করি। লোভ, লালসা, হিংসা, হানাহানি আমাদের হৃদয় ও জীবনকে বিষাক্ত ও কলুষিত করে, আমাদের স্রষ্টার প্রেম, করুণা ও বরকত থেকে বঞ্চিত করে, তাঁর শাস্তির মধ্যে নিপতিত করে এবং সর্বোপরি আমাদের পারলৌকিক জীবনের কঠিন ধ্বংস ও ক্ষতি নিশ্চিত করে।
কোরআন ও হাদিসে এ জন্য বারবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পৃথিবীতে নিজেকে প্রবাসী বা পথিক হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়েছে। এই স্মরণ আমাদের জন্য অগণিত সওয়াব অর্জনের পাশাপাশি আমাদের হৃদয়গুলোকে লোভ, হিংসা, প্রতিহিংসা ইত্যাদির কঠিন ভার থেকে মুক্ত করবে। আমাদের জীবনকে হানাহানি ও হিংস্রতা থেকে মুক্ত করবে।
দিনের বিভিন্ন অবসরে ও বিশেষ করে সকালে, সন্ধ্যা বা রাতে নির্ধারিত সময়ে নিজেকে স্মরণ করান : যে মানুষের পরবর্তী নিঃশ্বাসের নিশ্চয়তা নেই সে কী কারণে হানাহানিতে লিপ্ত হবে? কী জন্য সে লোভ করবে। সে তো পথিক। চলার পথের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করা ও পাথেয় সংগ্রহই তো তার কাজ। চলার পথে যদি কেউ কষ্ট দেয় তাকে সম্ভব হলে ক্ষমা করে দিই না কেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই তো তাকে আর দেখব না। রাস্তায়, ফেরিতে, রেলস্টেশনে বা এয়ারপোর্টে বসার চেয়ার, ট্রলি, খাবারের প্লেট, সামান্য ধাক্কাধাক্কির জন্য কি আমরা সময় নষ্ট করে মারামারিতে লিপ্ত হই? এই জীবন তো এসব অস্থায়ী স্থানেরই একটু বিস্তৃত রূপ। চেষ্টা করি না কেন এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে ক্ষমা, ভালোবাসা ও সেবায় ভরে দিতে। তাতে জীবন হবে আল্লাহর রহমতে ধন্য আর আমি অর্জন করব আখিরাতের অমূল্য পাথেয়।
পার্থিব স্বার্থপরতা বা লোভের জন্য প্রভুর নির্দেশনার বাইরে কাজ করছি? কী লাভ হবে তাতে? সে লাভ কি ভোগ করতে পারব? পারলে কত দিন। তারপর তো আমাকে প্রভুর কাছেই ফিরে যেতে হবে। অমুকের খুশির জন্য, তমুকের কাছে বড় হওয়ার জন্য, আরেকজনের কাছে প্রিয় হওয়ার জন্য আমি এই কাজটি করতে চাচ্ছি। কী লাভ তাতে? সে আমাকে কী দেবে? যা দেবে তা থেকে কি আমি লাভবান হতে পারব? আমাকে তো আমার প্রভুর কাছে একাকীই চলে যেতে হবে। আমার তো বাস্তববাদী হওয়া উচিত। সুতরাং নিজের জাগতিক ও পরকালীন জীবনের জন্য যে কাজে আমার রব খুশি সেই কাজই তো আমার করা উচিত।
সূত্র : রাহে বেলায়াত