Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeখেলাধুলাদুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ শেষ বাংলাদেশের!

দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ শেষ বাংলাদেশের!

দুঃস্বপ্নের আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষ হলো বাংলাদেশের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় জয়ে এবারের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় হারে আসর শেষ হলো টাইগারদের। গতকাল পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ৮ উইকেটে বাংলাদেশকে হারিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থান ধরে রাখলো অস্ট্রেলিয়া। ৯ ম্যাচে সাত জয় ও দুই হারে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় দল হিসেবে সেমিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। আর সমান ম্যাচে দুই জয় ও সাত হারে ৪ পয়েন্ট পেয়ে অষ্টম স্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করলো বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে তাওহিদ হৃদয়ের হাফসেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৬ রানের বড় পুঁজি পায় বাংলাদেশ। জবাবে মিচেল মার্শের হার না মানা সেঞ্চুরি ও স্টিভেন স্মিথের অপরাজিত হাফসেঞ্চুরিতে ৪৪.৪ ওভারে ২ উইকেটে ৩০৭ রান করে বড় জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

ভারত বিশ্বকাপকে বলা হচ্ছে রানবন্যার আসর। কিন্তু ৯ ম্যাচের মধ্যে আগের আট ম্যাচের একটিতেও বাংলাদেশ নিজেদের দলীয় সংগ্রহ ৩০০’র ঘরে নিতে পারেনি। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া ২৮০ রানের লক্ষ্য তাড়া করাটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। তবে শেষ ম্যাচে এসে সেই আক্ষেপটা ঘোচালেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই অজিদের বিপক্ষে মাঠে নেমে তিনশ পেরুনো ইনিংস খেললো টিম বাংলাদেশ। চরম ব্যর্থতায় বিশ্বকাপের এবারের আসরটা টাইগারদের জন্য দুঃস্বপ্নের হলেও সাকিববিহীন দল যে ভালো খেলতে পারে তা কালই প্রমাণ হয়েছে। পুরো টুর্নামেন্টে যেখানে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিকে রীতিমতো ধুঁকতে দেখা গেছে, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাবলীলভাবেই খেলেছেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন কুমার দাস। শুধু উদ্বোধনী জুটিই নয়, টপ ও মিডলঅর্ডার ব্যাটারদের সবাই রান পেয়েছেন এ ম্যাচে। ইনজুরি আক্রান্ত নিয়মিত অধিনায়ক সাকিবের পরিবর্তে এ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

টস জিতে অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স প্রথমে বাংলাদেশ দলকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান। ব্যাট করতে নেমে দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস। পাওয়ার প্লেতে ৬২ রান তোলেন তারা। এবারের বিশ^কাপে এ নিয়ে দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরির উদ্বোধনী জুটি পেল টাইগাররা। এর আগে পুনেতেই ভারতের বিপক্ষে ৯৩ রান তুলেছিলেন তানজিদ ও লিটন। ওই ম্যাচেও ছিলেন না সাকিব। তানজিদ-লিটন জুটি যখন সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলো তখনই বিচ্ছিন্ন হন তারা। ইনিংসের ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৭৬ রানে আউট হন তানজিদ তামিম। অজি পেসার সিন অ্যাবটের বাউন্সার সামলাতে না পেরে বোলারকেই ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৩৪ বলে ৬ চারের মারে ৩৬ রান করেন তানজিদ। তিনি আউট হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শান্তকে নিয়ে দলের রান ১৬তম ওভারে ১শ পার করেন লিটন। তবে এর আগে ১৫তম ওভারে স্পিনার এডাম জাম্পার বলে অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের হাতে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে জীবন পান লিটন। জীবন পেলেও বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। সেই জাম্পার বলে ১৬.৪ ওভারে দলীয় ১০৬ রানে লং অনে মার্নাস লাবুশেনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। শান্তর সঙ্গে ৩০ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেয়ার আগে ৪৫ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ৩৬ রান করেন এই ব্যাটার। লিটনের বিদায়ে ক্রিজে শান্তর সঙ্গী হন তাওহিদ হৃদয়। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলে এই জুটি। উইকেটে সেট হয়ে দলের বড় সংগ্রহের ভিত গড়তে থাকেন শান্ত ও হৃদয়। তবে হাফসেঞ্চুরির কাছে গিয়েই ফিরতে হয় শান্তকে। দুর্ভাগ্য তার দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে লাবুশেনের দারুণ ফিল্ডিংয়ে রান আউট হন শান্ত। তার ব্যাট থেকে ৫৭ বলে ৬ চারের মারে আসে ৪৫ রান। তৃতীয় উইকেটে দলকে ৬৬ বলে ৬৩ রান উপহার দেন শান্ত ও হৃদয়।

এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে বড় জুটির চেষ্টা করেন হৃদয়। কিন্তু কোনো জুটিই হাফসেঞ্চুরির গন্ডি পেরুতে পারেনি। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৪৮ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন হৃদয়। ফলে ৩২তম ওভারে ২০০ রান পায় বাংলাদেশ। আক্রমণাত্মক মেজাজে থাকা মাহমুদউল্লাহ ৩টি ছক্কাও আদায় করে নেন। কিন্তু ফের লাবুশেনের দারুণ ফিল্ডিংয়ে রান আউটে শেষ হয় মাহমুদউল্লাহর ২৮ বলে ৩২ রানের ইনিংস। তার ইনিংসে ১টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল। পঞ্চম উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে ৩৯ বলে ৩৭ রানের জুটি গড়ার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। এই জুটিতে দলের রান আড়াইশ পার করে থামেন মুশফিক। ৪২.১ ওভারে দলীয় ২৫১ রানে জাম্পার বলে মিড উইকেটে কামিন্সকে ক্যাচ দেন মুশফিক। আউট হওয়ার আগে তিনি ২৪ বলে এক ছক্কায় করেন ২১ রান। তবে মুশফিক ফেরার পরও দলের রানের চাকা সচল রাখেন হৃদয়। নিজের ইনিংসটাও বড় করছিলেন তিনি। কিন্তু ৪৭তম ওভারে দলীয় ২৮৬ রানে পেসার মার্কাস স্টয়নিসের বলে মিড উইকেটে লাবুশেনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৭৯ বলে ৭৪ রান করা হৃদয়। শেষদিকে মেহেদি হাসান মিরাজের ২০ বলে চার বাউন্ডারিতে ২৯ রানের সুবাদে ৩শ রানের ঘর পার করে বাংলাদেশ।

এবারের আসরে প্রথম এবং বিশ্বকাপ মঞ্চে পঞ্চমবার ৩শ রানের দেখা পেল টাইগাররা। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান বাংলাদেশের। অজিদের পক্ষে শন অ্যাবট এবং অ্যাডাম জাম্পা যথাক্রমে ৬১ ও ৩২ রানে পান ২টি করে উইকেট।

এ ম্যাচে ৩০৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে অজিরা যদি ২২.৪ ওভারে তা স্পর্শ করে জিততে পারে, তাহলে পয়েন্ট টেবিলের নবম স্থানে নেমে যাবে বাংলাদেশ। তখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে শঙ্কায় পড়বে টাইগাররা। আর যদি ১৭.২ ওভারে লক্ষ্য স্পর্শ করতে পারে, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টপকে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে সেমিতে খেলতে নামবে অস্ট্রেলিয়া। যার কোনোটাই হয়নি।

রান তাড়ায় নেমে অজিরা শুরুতেই ধাক্কা খায়। তাসকিন আহমেদ। ২.৫ ওভারে দলীয় ১২ রানে তাসকিন আহমেদের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ওপেনার ট্রাভিস হেড। আউট হওয়ার আগে তিনি ১১ বলে ২ চারের মারে করেন ১০ রান। তবে দ্বিতীয় উইকেটে মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার গড়েন সেঞ্চুরি জুটি। ১১৬ বলে গড়া তাদের ১২০ রানের জুটিটি অবশেষে ভাঙেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টারের বলে মিডঅনে শান্তর হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন আরেক ওপেনার ওয়ার্নার। ফেরার আগে ৬১ বলে ৬ বাউন্ডারিতে করেন ৫৩ রান। ব্যস ওই পর্যন্তই। তৃতীয় উইকেটে ১৩৫ বলে ১৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ বের করেই মাঠ ছাড়েন মিচেল মার্শ ও স্টিভেন স্মিথ। শেষ পর্যন্ত ১৩২ বলে ১৭ চার ও ৯ ছক্কায় ১৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন মার্শ। এটি তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। ৬৪ বলে চার বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় অপরাজিত ৬৩ রান করেন স্মিথ। বাংলাদেশের তাসকিন এবং মুস্তাফিজ যথাক্রমে ৬১ ও ৭৬ রানে পান ১টি করে উইকেট। ম্যাচসেরা হন মিচেল মার্শ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments