ঈদের আগে বাজার অস্থির
সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে এবং ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। সরকার বারবার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার বা দাম বাড়িয়ে দেওয়ার পরও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বর্তমানে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে যেসব খাদ্যপণ্যের দাম তার মধ্যে আছে পেঁয়াজ, আদা, কাঁচা মরিচ ও ডিম। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বৃহস্পতিবার খুচরায় বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা দরে। এক মাস আগেও খুচরায় পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। দেশি আদা বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, আর চায়না আদা বিক্রি হয়েছে ৩৮০ টাকায়। কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ডিমের দাম এক সপ্তাহে ডজনপ্রতি বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। সব ধরনের সবজির দামই কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের অজুহাতের অভাব হয় না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি আরো কত কী! সাম্প্রতিক বৃদ্ধির জন্যও ব্যবসায়ীদের নানা রকম যুক্তি আছে। দেশে কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৬ মার্চ থেকে হিলিসহ দেশের সব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। ব্যবসায়ীদের মতে, এটাই পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ। কাঁচা মরিচের আমদানিও বন্ধ রয়েছে। আদা প্রধানত আসে চীন থেকে। ব্যবসায়ীদের মতে, চীনেই আদার দাম বেড়ে গেছে। তাঁদের বক্তব্য কতটুকু সঠিক কিংবা কতটুকু মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক তা দেখার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকার কারণেই যদি পেঁয়াজের দাম এক মাসে দ্বিগুণ হয়ে যায়, তাহলে সরকারকে তা দেখতে হবে। প্রয়োজনে পুনরায় আমদানি অবারিত করতে হবে। ক্রেতাকে তো তিলে তিলে মেরে ফেলা যাবে না। কিন্তু ডিমের দাম কেন বাড়ছে? ডিম তো কখনোই আমদানি করা হয় না। তাহলে ডিম আমদানিরও অনুমতি দেওয়া হোক। আর সবজির দাম এভাবে লাফিয়ে বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাই বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির প্রধান কারণ। দুর্বল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার সুযোগ নেয় ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সিন্ডিকেট। সুযোগ বুঝে বাজার অস্থির করতে তারা নানা ধরনের কারসাজি করে। আবার ব্যবসায়ে নৈতিকতার অভাবও এ জন্য দায়ী। দেখা যায়, পবিত্র রমজান, ঈদ কিংবা অন্য কোনো উৎসবের আগে কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। সেই সুযোগে তারা সেসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।
ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। এ ক্ষেত্রে সরকারের বেশ কিছু সংস্থা কাজ করে। তাদের সঠিক ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে পণ্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।