‘খুব অবাক হয়েছি বাংলাদেশ আগে আমাদের ব্যাটিংয়ে পাঠানোয়। ডারবানে টস জিতলে আমরা ব্যাটিং নিই। সময়ের সঙ্গে এখানে উইকেট টার্নিং হতে থাকে।’- ডারবান টেস্টের প্রথম দিনশেষে কথাগুলো বলেন প্রোটিয়া ক্রিকেটার রিকেলটন। টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হকের সিদ্ধান্তে শুধু রিকেলটনই নন; বিস্মিত সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপনও। বিসিবি সভাপতির দাবি, কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর নির্দেশ উপেক্ষা করে সেদিন বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টাইগাররা। পাপন বলেন, দল খারাপ করলে ডমিঙ্গোকে বানানো হয় বলির পাঁঠা।
ডারবান টেস্টে শেষ ইনিংসে ব্যাট করা কঠিন কিন্তু টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক টসে জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ফল দৃশ্যমান, শেষ ইনিংসে মাত্র ৫৩ রানে লজ্জাজনকভাবে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিসিবি সভাপতি পাপন জানিয়েছেন, কোচ ডমিঙ্গো ক্রিকেটারদের আগে ব্যাট নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।একই পরামর্শ ছিল অ্যালান ডোনাল্ডেরও। তবে কজন সিনিয়র ক্রিকেটার এর বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন।
ক্রিকবাজকে পাপন বলেন, ‘সবার মুখোমুখি না হয়ে এ ব্যাপারে বলা কঠিন। আমি জানি, উভয় কোচই (ডমিঙ্গো এবং ডোনাল্ড) ডারবানে শেষে ব্যাট করার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলেছিলেন। সেখানে তো সুজন (টিম ডিরেক্টর) এবং জালাল ভাই (বিসিবি অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান) রয়েছেন, আমি আর কী বলবো!’
পাপন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে তারা (দক্ষিণ আফ্রিকান কোচিং স্টাফ) তাদের দেশের কন্ডিশন ভালো জানেন। আমি শুনেছি, মুমিনুল বলেছে এটা তার সিদ্ধান্ত ছিল। বেশ কজন সিনিয়র ক্রিকেটার আগে ব্যাট করতে চায়নি। আমি কী করতে পারি? আমার কিছু বলার নেই। শেষ মুহূর্তে তামিম বাদ পড়ে গেলো। আমি মনে করি, তারা সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারতো (বোলিংয়ের)।
পাপন মনে করেন, কোচিং স্টাফদের পরাশর্ম না শুনলে আরো খারাপ ফল হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি কোচদের সিদ্ধান্তকে সম্মান না জানাই, ভবিষ্যতে আরো ঝামেলায় পড়তে হবে। আমি কোচের সঙ্গে কথা বলে অনেক (খেলোয়াড় ও কোচদের কথায়) পার্থক্য পেয়েছি। আমাদের এক সঙ্গে বসতে হবে। আমার বিশ্বাস ছিল ড্রেসিং রুমের পরিবেশ উন্নত হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি নিশ্চিত নই কী ঘটছে।’
কোচদের মতকে অগ্রাধিকার দেয়ার ব্যাপারে খেলোয়াড়দের নির্দেশ দেবেন পাপন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে বলেছিল (কোচ নিয়ে) সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সমস্যা আরো বাড়ছে। আমাদের এটা পরিবর্তন করতে হবে।’
প্রত্যেক হারের দায় ডমিঙ্গোর ঘাড়েই বর্তায় বলে হতাশ বিসিবি বস। পাপন জানান, কিছু ক্রিকেটার কোচ হিসেবে ডমিঙ্গোকে পছন্দ করেন না। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা কোনো কারণ ছাড়াই তাকে বলির পাঁঠা বানাই। ক্রিকেটাররা কি তার কথা শোনে? আমি জানতে চাই সত্যিই কি শোনে তারা (কোচরা) কী বলতে চায়? যারা তার কথা শুনছে তাদের সবারই উন্নতি হচ্ছে। ১৫ জন ক্রিকেটারকে জিজ্ঞেস করা হলে তাদের ১১ জনই বলবে তিনি একজন দুর্দান্ত কোচ।’
ডমিঙ্গোকে নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অসন্তুষ্টির খবর নতুন নয়। দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে থাকা অবস্থায় মিরপুরে বাংলাদেশের সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, এটা (ডমিঙ্গোকে বাদ দেয়া) তো বিসিবির সিদ্ধান্ত। আমার কাছে জিজ্ঞেস করেছেন, আমি বলছি আমার কাছে মনে হয় এখন পর্যন্ত ডমিঙ্গোর সাফল্যের হার ঐদিকে নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্লেয়ারদের অনেক অভিযোগ আছে তাকে নিয়ে।’ গত বছর কোচিং স্টাফদের নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন মাশরাফি। তিনি সরাসরি বলেছিলেন, ‘এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচগুলো একসঙ্গে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে এ বিষয়ে বেশ কৌশলী উত্তর দিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ডমিঙ্গোর সক্ষমতার পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মত না দিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। গত নভেম্বরে রিয়াদ বলেছিলেন, ‘এটা (কোচ যোগ্য কি না) আমার পক্ষে বলা কঠিন। রাসেল ডমিঙ্গোর বিষয়টি পুরোপুরি ক্রিকেট বোর্ডের কাছে।’
চাকরি হারানোর শঙ্কায় থাকা ডমিঙ্গোকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার আগে প্রশ্ন করা হয়, ‘এটিই কি আপনার শেষ সফর?’ যদিও সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন ডমিঙ্গো। তবে প্রোটিয়াদের ওয়ানডে সিরিজ হারিয়ে ডমিঙ্গোর গদি শক্ত হয়েছে বলাই যায়।