পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ভয়াবহ উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। পৃথিবীর অন্যতম শীতলতম অঞ্চল দক্ষিণ মেরু নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা নিয়ে বিস্ময়কর একটি চিত্র তুলে ধরেছেন অ্যান্টার্কটিক মালভূমির পূর্বপ্রান্তে অবস্থানরত গবেষকরা।
২০২২ সালের ১৮ মার্চ দক্ষিণ মেরুর বরফে ঢাকা পূর্বদিকের মালভূমিতে একটি ঘটনার কথা লিপিবদ্ধ করেন তারা। সেখানে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের একটি বিশ্ব রেকর্ড তাপমাত্রা উল্লেখ করা হয়েছিল। এটি তার মৌসুমি গড় থেকে একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ছিল। পৃথিবীর অন্যতম শীতলতম অঞ্চলে এ হার বাড়তে থাকলে তা বিপর্যয় ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। এনডিটিভি
গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা তাপমাত্রা বাড়ার এতবড় এক লাফের কথা লেখেন, যা এ যাবৎকালে বিশ্বের কোনো আবহাওয়াকেন্দ্রের নজরে আসেনি। তারা জানিয়েছেন, সেদিন অঞ্চলটির তাপমাত্রা মৌসুমি গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়, যা একটি বিশ্ব রেকর্ড। মেরু গবেষকরা বিশ্বের সবচেয়ে হিমশীতল জায়গায় তাপমাত্রার এ পরিস্থিতিকে বর্ণনা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক দলের নেতা অধ্যাপক মাইকেল মেরেডিথ বলেছেন, শূন্য অঙ্কের নিচে থাকা তাপমাত্রায় এতবড় বৃদ্ধি সহনীয়। কিন্তু এখন যদি যুক্তরাজ্যে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তবে আসন্ন গরমে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে। মানুষের জন্য সেটা হবে মারাত্মক। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, নিম্ন অক্ষাংশ থেকে উষ্ণ এবং আর্দ্র বাতাসের ক্রমবর্ধমান পরিমাণ মেরুমুখী বায়ু অ্যান্টার্কটিকার গভীরে প্রবেশ করেছে।
এছাড়াও গত দুই বছরে সমগ্র মহাদেশজুড়ে আবহাওয়ার অস্বাভাবিকতার কারণে মহাদেশের চার পাশের সমুদ্রের বরফ স্তর সঙ্কুচিত হয়েছে। পশ্চিম অ্যান্টার্কটিক বরফের সীমানায় থাকা হিমবাহগুলো সমুদ্রের ভেতরে চলে যাচ্ছে। উষ্ণ সমুদ্রের পানি বরফগুলোকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করছে এবং কয়েক দশকের মধ্যে এগুলো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়তে পারে। ফলে পরবর্তী দশকগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। বরফখণ্ডগুলো সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৫ মিটার বৃদ্ধি পাবে। যা সারাবিশ্বে উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলোকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। গ্রিনহাউস গ্যাসের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিকে এর পেছনে মূল কারণ হিসাবে দায়ী করছেন গবেষকরা। মানব উদ্বেগের পাশাপাশি গুরুতর পরিবেশগত প্রভাবও ছড়িয়ে পড়ার হুমকি রয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভেভিত্তিক রাসায়নিক সমুদ্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক কেট হেন্ড্রি।