Saturday, April 20, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামথার্ড টার্মিনালের কেনাকাটায় দুর্নীতি

থার্ড টার্মিনালের কেনাকাটায় দুর্নীতি

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ বর্তমান সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শাহজালাল বিমানবন্দরের কর্মক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু এই টার্মিনালের কেনাকাটায় বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে এই কেনাকাটা। প্রকল্পটির অবকাঠামো তৈরির কাজ ৩৭ শতাংশ শেষ হয়েছে, এখন চলছে অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য কেনাকাটা আর এই কেনাকাটায় দেখা দিয়েছে অস্বচ্ছতা। বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) প্রকল্পের প্রতিটি পণ্যের মান ও গ্রেড স্পষ্ট করে দিলেও সিন্ডিকেট তা মানছে না। প্রকল্পে ঢোকানো হচ্ছে মানহীন ও নিম্ন গ্রেডের পণ্য। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, বেবিচক সবকিছু দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে যাদের ওপর, সেই কনসালটেন্টের অনেক সদস্য এখন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। তাদের চোখ এখন প্রধানত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দিকে। ইতোমধ্যে তারা প্রকল্পের ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে বেশকিছু নিম্নমানের পণ্য দক্ষিণ কোরিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসে। বিষয়টি বেবিচকের নজরে এলে সব পণ্যের মান যাচাই-বাছাই করা হয়। এতে বেশিরভাগ পণ্য নিম্নমানের হওয়ায় সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। বেবিচকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, আলোচ্য সিন্ডিকেট প্রকল্পের লিফট, বৈদ্যুতিক কেব্ল, বৈদ্যুতিক সুইচ, ভাল্ব, টাইলস, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার, এস্কেলেটর, স্ক্যানিং মেশিন, এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম ও স্যানিটারি আইটেমসহ বেশকিছু নিরাপত্তা পণ্য তাদের পছন্দের দেশ ও কোম্পানির কাছ থেকে কেনার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার ও কনসালটেন্টের অধিকাংশ সদস্য সিন্ডিকেটের সঙ্গে একাট্টা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, কোনো পণ্য ক্রয়ের কার্যাদেশ দেওয়ার জন্য মাত্র ছয়জনের স্বাক্ষর দরকার হয়। সিন্ডিকেটের পক্ষে এর চেয়ে বেশি সদস্য থাকায় তাদের জন্য কার্যাদেশ পেতে কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কেনাকাটা নিয়ে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। বলা বাহুল্য, এই বিমানবন্দর হলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের প্রধান দ্বার। ফলে এ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও সার্বিক শৃঙ্খলার বিষয়টি গুরুত্বের দাবি রাখে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিমানবন্দরটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে যদি নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার করা হয়, তাহলে এর নিরাপত্তা শুধু নয়, সৌন্দর্যের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। তাই আমাদের কথা হলো, থার্ড টার্মিনালে নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার যে কোনো উপায়ে রোধ করতে হবে। ভাঙতে হবে সিন্ডিকেটের চেইন। শুধু তাই নয়, যারা নিম্নমানের পণ্য দিয়ে থার্ড টার্মিনালটিকে সাজাতে চায়, তাদের প্রত্যেককে নিয়ে আসতে হবে জবাবদিহির আওতায়।

বিমান ও বেবিচকের দুর্নীতি নতুন কোনো ঘটনা নয়, এ দুটি সংস্থার দুর্নীতি নিয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীকেও এসব দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে শোনা গেছে। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও বিমান ও বেবিচকের দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। আমাদের শেষ কথা হলো, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় এসব দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ না করলে তা বন্ধ হবে না বলেই প্রতীয়মান হয়। বিমান ও বেবিচকের যাবতীয় কর্মকাণ্ড কঠোর মনিটরিংয়ে রাখা হবে-এটাই প্রত্যাশা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments