বিউটি আক্তার জানতেন- তিনি নির্বাচনে মাত্র ৩০০ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন। ভোটারদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে নিজের পরাজয় মেনেও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনের আটদিন পর আজ শনিবার একটি খবর পেয়ে ভোটকেন্দ্রের ওই বিদ্যালয়ে যান তিনি। দেখতে পান- যে প্রতীকে তিনি নির্বাচন করেছিলেন, সেই তালগাছ প্রতীকে সিলমারা ৫২৭টি ব্যালট কেন্দ্রের ছাদ থেকে নামানো হচ্ছে। যা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই নারী প্রার্থী।
অথচ সেগুলো কোনভাবেই কেন্দ্রের ছাদে থাকার কথা নয়। বোঝা যাচ্ছে- কেউ পরিকল্পিতভাবে কেবল একটি প্রতীকে সিলমারা ব্যালটগুলো বাক্স থেকে সরিয়ে ফেলেছেন। আর এরকম ৫২৭টি ব্যালট খোয়া যাওয়ায় ৩০০ ভোটের ব্যবধানে হারতে হয়েছে বিউটি আক্তারকে। অন্যথায় ২২৭ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হতে পারতেন তিনি।
জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নে দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে তালগাছ প্রতীক নির্বাচন করেছিলেন বিউটি আক্তার। নির্বাচনে মাইক প্রতীকে রাশেদা বেগম নামে এক প্রার্থী ১৮শ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। বিপরীতে ১৫শ ভোট পান বিউটি।
তবে নির্বাচনের ৮ দিন পর আজ সকালে এ ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র সেহরাতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে শিশু শিক্ষার্থীরা খেলতে গিয়ে কিছু ব্যালট পেপার দেখতে পায়। তারা বিষয়টি শিক্ষকদের জানায়। পরে শিক্ষকরা স্থানীয়দের জানালে বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিউটি আক্তার ঘটনাস্থলে যান। দেখতে পান সবগুলো ব্যালটেই তালগাছ প্রতীকে সিলমারা।
বিউটি আক্তার বলেন, ‘আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। নির্বাচনে আমাকে ৩০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত দেখানো হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আট দিন পর আমার নিজ কেন্দ্রের বিদ্যালয়ের ছাদে তালগাছ প্রতীকের সিলমারা ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে।’
পরাজিত এই প্রার্থী বলেন, ‘এই ব্যালট পেপারগুলো একত্রিত করলে আমি দুই শতাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতাম। নির্বাচনে ফেল করাতেই আমার প্রতীকে সিলমারা ব্যালট পেপার বিদ্যালয়ের ছাদে রেখে দেয়। পরে ভোট গণনা করে আমাকে ফেল দেখানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাবো। ব্যালট পেপারগুলো আমার কাছে এনে রেখেছি।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। প্রার্থী ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করে আইনগত ব্যবস্থা চাইতে পারেন।’
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এএইচএম কামরুল হাসান বলেন, কে বা কারা ব্যালট পেপারগুলো বিদ্যালয়ের ছাদে রেখে গেছেন, সেটা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন শেষ করে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সিলগালা করে ফলাফল ঘোষণা করেছেন। তখন কোনো প্রার্থীর অভিযোগ ছিল না।
দেলদুয়ার থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘অফিশিয়ালি অভিযোগ বা কোনো নির্দেশনা পেলে বিষয়টি তদন্ত করব।’