মানুষ সামাজিক জীব। সমাজজীবনের প্রাত্যহিক প্রয়োজন সম্পাদনকল্পে প্রত্যেকেই নিজ নিজ ভঙ্গিমায় নিজস্ব কর্ম সম্পাদন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেককেই দেখা যায় নিজস্ব কর্ম সম্পাদন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড্ড তাড়াহুড়ার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এটি একটি নিন্দনীয় স্বভাব। পবিত্র কোরআনের সুরা আম্বিয়ার ৩৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবে তাড়াহুড়াপ্রবণ, শিগগির আমি তোমাদের আমার নিদর্শনাবলি দেখাব; কাজেই তোমরা তাড়াহুড়া কামনা কোরো না। কোরআনের অন্যত্র এটাকে মানুষের দুর্বলতারূপে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘মানুষ অত্যন্ত ত্বরাপ্রবণ।’ (সুরা : আল ইসরা, আয়াত : ১১)
আয়াত দুটির মূল কথা হলো ত্বরাপ্রবণতা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। (তাফসিরে কুরতুবি)
তাড়াহুড়া অনেক ক্ষতি ডেকে আনে। কাজেই কোনো প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে একদম তাড়াহুড়া করা উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ধৈর্য ও স্থিরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০১২)
তাড়াহুড়ার কোনো কাজ যথার্থ হয় না; বরং যেকোনো কাজে রাসুল (সা.) উম্মতকে পরামর্শের সুন্নাহ শিখিয়েছেন। ইসতিখারার দীক্ষা দিয়েছেন। যার সবগুলোতেই তাড়াহুড়া বর্জনের শিক্ষা পাওয়া যায়। আল্লামা ইবনুল কাইউম আল-জাওজিয়্যাহ (রহ.) বলেন, তাড়াহুড়াকে শয়তানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে; তাড়াহুড়া করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বা কোনো কাজ সম্পাদন করা হয়, এতে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, উত্তেজনা কিংবা ক্রোধ শামিল থাকে। এর ফলে বান্দার আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্বের হানি ঘটে। ক্ষেত্র বিশেষে এই তাড়াহুড়ার জন্য ব্যক্তিকে অপমান ও অপদস্থতার সম্মুখীনও হতে হয়।
কোনো কারণে কারো ওপর ক্ষুব্ধ হলেও ক্রোধ প্রকাশে তাড়াহুড়া করা মোটেও সমীচীন নয়। এতে একদিন তা আক্ষেপের কারণ হতে পারে। ঠিক তেমনি কাউকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার আগে ভালোবাসা বা ঘৃণা করা কোনোটিই সংগত নয়। কারণ একদিন তা অনুশোচনার উপলক্ষ হতে পারে। মানুষ অন্যের গিবত-শিকায়েত করতেও তাড়াহুড়া করে ফেলে। একজন মানুষের কোনো বিষয় খারাপ লাগতেই পারে। কিন্তু তাকে পর্যাপ্ত সময় পর্যবেক্ষণ না করে সমালোচনায় লিপ্ত হলে একদিন এর জন্য লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসতে পারে। ইসলাম নির্দেশিত ভদ্রতা ও সৌজন্যতা রক্ষা করে চললে, মুমিন ভাইদের হক সম্পর্কে সচেতন থাকলে এই লজ্জাকর পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই কাউকে পড়তে হবে না।
সর্বক্ষেত্রে ভারসাম্য ও মধ্যম পন্থা অবলম্বন করাই ইসলামের শিক্ষা। তাই আসুন আমরা তাড়াহুড়ার মানসিকতা পরিহার করি। কারণ এটি একটি আত্মিক ব্যাধি, যার উৎস হচ্ছে মানসিক অস্থিরতা, অহংকার আর ইসলামের জ্ঞানের অভাব। তবে উৎস যা-ই হোক, সর্বাবস্থায় তা নিন্দনীয় ও বর্জনীয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সর্বক্ষেত্রে ভারসাম্য ও মধ্যম পন্থা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও মুহাদ্দিস