শিল্পী মানেই আবেগপ্রবণ। তারা পৃথিবীর সবকিছুতে বিশ্বাস রাখে ও সৌন্দর্য খুঁজে। কখনো কখনো এ বিশ্বাস সংসার জীবনে মিথ্যা প্রমাণ হয়। তখনই কোন শিল্পীর জীবন ওলট-পালট হয়ে যায়। অবশ্য অনেকেই ব্যক্তিজীবনের ঝড় কে পিছনে ফেলে এগিয়ে যান। সেই এগিয়ে যাওয়া একজনই নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী চাঁদনী। কেমন আছেন এখন তিনি? উত্তরে তিনি বলেন, ভালো আছি। ভালো থাকার চেষ্টা তো করতে হবে। ব্যস্ততা কি নিয়ে এখন? চাঁদনী বলেন, আমার ভালোবাসার জায়গা হলো নাচ। ইদানিং কর্পোরেট শো বেশি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীতে অফিসার্স ক্লাবে প্রোগ্রাম করলাম। চলতি মাসে শিল্পকলা একাডেমিতে নৃত্য পরিবেশনের কথা রয়েছে। আর বরাবরই আমার ভালোবাসার জায়গা বিটিভিতে বেশকিছু নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি।
এর বাইরে বাংলাদেশ বেতারে তিনটি নাটকে অভিনয় করলাম। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি বেতারে এই নাটকগুলোতে আফজাল ভাই, দিলারা জামান আন্টি, চুমকি আপা শিমুল ভাই, জলি আপার মত গুণী শিল্পীদের সঙ্গে কাজের সুযোগ হয়েছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘৩২ নম্বর বাড়ি’ নাটকে কাজ করেছিলাম। অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া চাঁদনী কে নাচেই বেশি দেখা যায়। কিন্তু অভিনয়ে কম দেখতে পাওয়ার কারণ কি? চাঁদনী বলেন, আমি অল্প বয়সে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। সে বয়সে এ পুরস্কারের মর্যাদা বুঝতে পারিনি। কিন্তু আমার সহকর্মীরা আমাকে বুঝাতো। সত্যি বলতে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে, কিন্তু চরিত্র পছন্দ না হওয়ায় করা হয়ে ওঠে না।
আমার স্বপ্ন চলচ্চিত্রে নিজেকে মেলে ধরার। তাই অপেক্ষায় আছি। একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে নৃত্যনাট্যে কোন চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপনের স্বপ্ন দেখেন? চাঁদনীর উত্তর- শ্যামা, নকশী কাঁথার মাঠ, মহুয়া নৃত্যনাট্যে নিজেকে দেখতে চাই। সত্যি বলতে সাপ নিয়ে নৃত্যনাট্য ‘মহুয়া’ করার স্বপ্ন দেখি। এবার একটি ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। বিয়ে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন কিনা? চাঁদনী এ প্রসঙ্গে বলেন, বিয়ে-শাদী নিয়ে তো কম জলঘোলা হলো না। তাই বলে আমি এটাকে তিক্ততা বলবো না। সবই ভাগ্য। শতভাগ চেষ্টা ছিল আমার কিন্তু বিধাতা হয়তো চাননি। তাই ঘর করা হলো না। বিয়ের জন্য ক্যারিয়ারের অনেক সুযোগ হাতছাড়া করেছি।
আমার অনেক সহশিল্পী বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। আমি খুব আনন্দিত হই তাদের দেখে। কিন্তু শুনে আশ্চর্য হবেন, ঢাকায় আজও নিজের মাথা গোঁজার ছাদটুকু নেই। গাড়ি নেই, ব্যাংক ব্যালান্স নেই। চাঁদনী আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত একজন ক্ষুদ্র শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের শিল্পী কোঠায় এক টুকরো জমি কি আমি পেতে পারি না? অনেক আগেই তো বাবাকে হারিয়েছি। মাকে নিয়ে আমার জীবন যুদ্ধ। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানও করেছি, যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান শেষে আমার নাচের প্রশংসা করেছেন।