ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশটির সঙ্গে পুনরায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো।
আর্জেন্টিনা ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে দূতাবাস খুলেছিল। কিন্তু ১৯৭৮ সালে সেদেশের তৎকালীন সামরিক সরকার তা বন্ধ করে দেয়।
এরপর দীর্ঘ ৪৫ বছর এ দেশে আর্জেন্টিনার কোনো দূতাবাস ছিল না। বাংলাদেশে পুনরায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস খোলার পেছনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে ফুটবল।
এ দেশের জনগণের একটি বড় অংশ আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থক। আর্জেন্টিনা গত ফিফা বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের দর্শকদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রত্যুত্তরে আর্জেন্টিনার অনেক মানুষও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বলা যায়, এ সূত্র ধরেই দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। সেদিক থেকে আর্জেন্টিনার দূতাবাস খোলার এ ঘটনাকে ‘ফুটবল কূটনীতির বিজয়’ বলা যেতে পারে।
এ কারণে বলা হচ্ছে, এর পেছনে শুধু কূটনৈতিক উদ্যোগ নয়, আবেগও জড়িত। দূতাবাস উদ্বোধনকালে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরো যেমনটা বলেছেন-‘পুনরায় দূতাবাসের উদ্বোধনে শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, দুই দেশের জনগণের ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরালো হবে।’
দূতাবাস উদ্বোধন ছাড়াও সোমবার বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি সই হয়েছে। এর ফলে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টে আর্জেন্টিনা যেতে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা লাগবে না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সুদূর লাতিন আমেরিকার একটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ স্থাপিত হলো। উল্লেখ্য, বিশ্বের ওই অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ অত্যন্ত সীমিত। গত বছর আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার রপ্তানির পরিমাণ ৭৪২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ২২ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল এবং তা আর্জেন্টিনার অনুকূলে।
দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ফলে এ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির প্রয়াস নিতে পারে। এছাড়া তৈরি পোশাক ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখতে পারে। আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে, এটাই প্রত্যাশা।