মেঘলা আকাশ, আলোর অভাবে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো সবগুলো ফ্লাডলাইট। স্বাভাবিকভাবেই এই কন্ডিশনে পেসাররা রাজত্ব করবেন। হলোও তাই, টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৪ রানেই ৪ উইকেট হারালো ঢাকা। কনকাশন বদলি লাসিথ ক্রুসপুলের ক্যামিওতে অবশ্য শেষ পর্যন্ত লড়াকু সংগ্রহ পেলো তারা। তবে শুরুতে আভিষ্কা-তামিম আর শেষে নাজিবুল্লাহ জাদরানের দারুণ ব্যাটিং ঢাকাকে লড়াইও করতে দেয়নি। সহজ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে চট্টগ্রাম। গতকাল চলতি বিপিএলের তৃতীয়দিনের প্রথম খেলায় দুর্দান্ত ঢাকাকে ৬ উইকেটে হারায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। আসরে ৩ ম্যাচে এটা চট্টগ্রামের দ্বিতীয় জয়। আর দুই ম্যাচ খেলা ঢাকার প্রথম হার। এদিন আগে ব্যাটিং করতে নেমে ১৩৫ রান করে ঢাকা।
জবাবে ৪ উইকেট হারিয়ে ১০ বল বাকি থাকতেই জয় পায় চট্টগ্রাম। ৩ ম্যাচে ২ জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে চট্টলার দলটি। আর ২ ম্যাচে ১ জয় পাওয়া ঢাকা আছে ৪ নম্বরে।
ঢাকার দেওয়া ১৩৬ রান তাড়া করতে নেমে চট্টগ্রামকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন লঙ্কান ওপেনার আভিষ্কা ফার্নান্দো। প্রথম ৫ বলেই হাঁকান ৩ চার। ওই ওভারের শেষ বলেই তাকে ফিরিয়ে দেন ঢাকার বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। ৬ বলে ১২ রান করেন ফার্নান্দো। ৯ রানের ব্যবধানে ফিরে যান ইমরান উজ্জামানও। ৩ বলে ১ রান করেন তিনি। এরপর শাহাদাত হোসেন দীপুকে নিয়ে শুরুর চাপ সামলান আরেক ওপেনার তানজীদ হাসান তামিম। দুজনের ব্যাটে চড়ে জয়ের রাস্তা তৈরি হয় চট্টগ্রামের। তবে শুরুতে ঢাকার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রানের চাকা সচল রাখতে হিমশিম খাচ্ছিলেন দুজনই। পরের অবশ্য খোলস ছেড়ে বের হন তারা, এর মধ্যে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে টানা তিন চার মারেন তামিম। এতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৫৪ রান। দীপুটা যত অস্বস্তিতে ছিলেন তামিম যেন ততটাই সাবলীল ছিলেন। প্রথম ২১ বলে তার সংগ্রহ ছিল ৩২ রান। ৪৫ বলে দুজনের জুটিতে ৫০ রান পূর্ণ হয়। প্রথম ১০ ওভারে চট্টগ্রামের সংগ্রহ ছিল ৭৮ রান। ১১তম ওভারের শেষ বলে দীপু আউট হলে ভাঙে তাদের ৫৩ রানের জুটি। ঢাকার পাকিস্তানি বোলার উসমান কাদিরের বলে আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩১ বলে ২২ রান।
তখনও একপাশ আগলে ছিলেন তামিম। উইকেটে আসা নাজিবুল্লাদ জাদরানকে নিয়ে গড়ছিলেন চট্টগ্রামের জয়ের মঞ্চ। তবে দলীয় ১০৫ রানে বিদায় নেওয়া তামিম ফিফটি মিস করেন মাত্র ১ রানের জন্য। তাসকিন আহমেদের বাইরে বলে তাড়া করতে গিয়ে ডিপ পয়েন্ট অঞ্চলে ধরা পড়ার আগে তামিম করেন ৪০ বলে ৪৯ রান। যেখানে ছিল ৫ চার ও ১ ছক্কা। এরপর শেষদিকে জাদরান খেলেন ১৯ বলে ৩ ছক্কা ও ১ চারে ৩২ রানের দারুণ ক্যামিও। এতে ১০ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত হয় চট্টগ্রামের। ঢাকার হয়ে জোড়া উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। এছাড়া তাসকিন ও উসমান নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে টস হেরে মেঘলা আকাশের নীচে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে দুর্দান্ত ঢাকা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে চট্টগ্রামের পেসার আল আমিনের বলে আহত হন ঢাকার শ্রীলঙ্কান ওপেনার ধানুশকা গুনাথিলাকা। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ৯ বলে ১ রান করেন তিনি। এরপর অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন ফেরেন ০ রানে। ৬ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। বিপিএলে এই ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হওয়া অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার অ্যালেক্স রস দুই চারে ভালো শুরু করলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হয়ে ফেরেন। তার ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। এরপর গুনাথিলাকার কনকাশন বদলি হিসেবে নামা লাসিথ ক্রসপুলকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ইরফান শুক্কুর। তাদের ব্যাটে শুরুর চাপ কাটিয়ে সচল হয় ঢাকার স্কোরবোর্ড। ১৬তম ওভারে ক্রসপুল আউট হলে ভাঙে তাদের ৪৭ বলে ৭৩ রানের জুটি। ফেরার আগে ৩১ বলে ৪৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন ক্রসপুল। যেখানে ছিল ৩চার ও ২ছক্কা। সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ টেকননি ইরফানও। ইনিংসের ১৮তম ওভারে চট্টগ্রামের ওমানের বাঁহাতি পেসার বিল্লাল খানের ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ইরফানের ব্যাট থেকে আসে ২৬ বলে ২ চারে ২৭ রান। এরপর শেষদিকে তাসকিন আহমেদের ৯ বলে ১৫ রানের ক্যামিওতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রানে থামে ঢাকার ইনিংস। চট্টগ্রামের হয়ে জোড়া উইকেট নেন আল আমিন হোসেন ও বিল্লাল খান।