নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসাবে কাজ করবে, এটাই মানুষ আশা করে। জানা যায়, শতবর্ষের এ মহাপরিকল্পনার প্রথম ধাপ ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এ সময়ে ৮০টি প্রকল্পের আওতায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোয় চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগ হচ্ছে ৩৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বহুমুখী কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে, এটা নিশ্চিত। যথাযথভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আশা করা যায়, আগামী এক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
যেহেতু আমাদের দেশে সম্পদ সীমিত, সেহেতু এই সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বন্যা, নদীভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়নে দেশের সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ যত বেশি বাড়ানো যাবে, কাজের গতি ও মান তত বাড়বে। জানা যায়, ডেল্টা প্ল্যানের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি কর্মীদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্যও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের দেশে যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। কাজেই ডেল্টা প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীভাঙন রোধ, নদী ব্যবস্থাপনার মতো প্রকল্পগুলোয় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্যও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আগামী দিনগুলোয় যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষ মানবসম্পদের সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির বাধাগুলো দূর করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জনের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। শিক্ষা খাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত না হলে দেশের টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যাকবলিত হচ্ছে, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাণ্ডব বেড়েছে। এতে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক দশক পর বিস্তীর্ণ অঞ্চল আবাদ অযোগ্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতি বৃষ্টিপাতের ফলে শহর অঞ্চলেও নানা রকম সমস্যা বাড়তে পারে। এসব সমস্যা দেশের সার্বিক উন্নয়নেও প্রভাব ফেলতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে উল্লিখিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হলে আশা করা যায়, দেশের প্রান্তিক মানুষও ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের সুফল পাবে। যেহেতু ডেল্টা প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলোয় বিপুল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে, সেহেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।