Thursday, June 8, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামডলারের দামে কারসাজি: প্রতিরোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে

ডলারের দামে কারসাজি: প্রতিরোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে

চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে একটি চক্র বাজার থেকে অপ্রয়োজনে ডলার কিনে মজুত করছে বলে তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও গোয়েন্দা সংস্থা। খোলাবাজার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকে ডলারের দাম হুহু করে বাড়ছে। মঙ্গলবার খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১২ টাকায় উঠেছিল। ডলারের দাম নিয়ে কারসাজির বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

বিভিন্ন দেশ করোনা-নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় মানুষের বিদেশ ভ্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত কয়েক মাস ধরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মুদ্রামানের বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আর এরই সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা। শুধু ব্যক্তি নয়, কয়েকটি মানি চেঞ্জার্স, এমনকি বাণিজ্যিক ব্যাংকও এ কারসাজিতে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

একটি ব্যাংক নগদ ১০৪ টাকায় কিনে ১০৮ টাকায় ডলার বিক্রি করছে বলে তথ্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এভাবেই বাজারে ডলারের এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একে মুনাফার হাতিয়ারে পরিণত করা হচ্ছে, যা বন্ধ করা জরুরি বলে মনে করি আমরা।

বস্তুত অর্থনীতির নানা কারণে ডলারের দামের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু যখন এক্ষেত্রে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়, তখনই তা হয় বিপত্তির কারণ। ডলারের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির প্রভাব শুধু নিত্যপণ্যের বাজারেই পড়ছে না, এর অজুহাতে প্রতিটি সেবা ও সামগ্রীরই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে এটি দেশের অর্থনীতির জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ডলারের দাম বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া খোলাবাজারে অস্বাভাবিক দামের কারণে ডলার পাচারের আশঙ্কাও করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কাজেই কারসাজি করে ডলারের দামবৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করা দরকার কঠোরভাবে। সেক্ষেত্রে বাজারে কোন কোন গোষ্ঠী বা চক্র ডলার কারসাজিতে জড়িত, তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করা জরুরি।

তবে এ উপায়ে সাময়িকভাবে সমস্যাটি মোকাবিলা করা গেলেও এটি স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধান হলো বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ানো। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তবে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া। ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে আমদানি ব্যয় কমানোর কাজটি কঠিন হলেও বিলাসী পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া সহজেই সম্ভব।

অবশ্য এ ব্যাপারে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ইতোমধ্যেই। এ সময়ে আমদানিনির্ভর নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া রফতানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার জোরোশোরে।

পুঁজিবাজারে অস্থিরতা এবং ব্যাংক আমানতের সুদের হার কম হওয়ায় অনেক সাধারণ মানুষও হয়তো ডলার কিনে মজুত করছেন পরে দামবৃদ্ধির আশায়। সামগ্রিকভাবে এর পরিমাণ হয়তো খুব বেশি নয়; তবে বিষয়টি মাথায় রেখে মানুষের সঞ্চয়ের সুযোগ আরও সম্প্রসারিত করা উচিত বলে মনে করি আমরা। ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments