পূর্ব ইউক্রেনে জোরদার হচ্ছে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন। ডনবাস অঞ্চলে এখন সার্বক্ষনিক রুশ সেনাদের অস্ত্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে। উত্তর ইউক্রেন আক্রমণে রাশিয়া যে বাহিনী পাঠিয়েছিল তা এখন ডনবাসে ফিরে আসছে। রাশিয়ার এখন একমাত্র উদ্দেশ্য পূর্ব ইউরোপ দখলে নেয়া এবং লুহানস্ক ও দনেৎস্ক নামের যে দুটি দেশের স্বাধীনতায় স্বীকৃতি মস্কো দিয়েছে তা টিকিয়ে রাখা। এ অঞ্চল দুটির বেশিরভাগ এলাকা আগে থেকেই রুশপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন যুদ্ধের মাধ্যমে পুরো এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে চায় মস্কো।
বিবিসির রিপোর্ট বলছে, উত্তরে ইউক্রেনের সেনাদের প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়েছে রাশিয়া। রাজধানী কিয়েভে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়ার সামরিক অভিযান। তবে দক্ষিণ ও পূর্ব ইউক্রেনের হিসেব আলাদা।এরইমধ্যে লুহানস্কের ৯০ শতাংশ এবং দনেৎস্কের ৫০ শতাংশেরও বেশি এলাকা দখলে নিয়েছে রুশপন্থীরা। এই অঞ্চল দুটি ইউক্রেনের প্রধান শিল্পাঞ্চল। গত ৮ বছর ধরেই এ অঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে চলেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এ অঞ্চলে যুদ্ধ করতে করতে তারা এখন অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার বাহিনীকে হটিয়ে আবারও এ অঞ্চলে ইউক্রেনের শাসন নিশ্চিত করতে চায় তারা। পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, ডনবাসে এখন ইউক্রেন যেই সেনাদের মোতায়েন করছে তারা সবাই প্রশিক্ষিত এবং আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। যদিও রাশিয়া যেভাবে পরিকল্পনা করছে তাতে এই ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা চারদিক থেকে আটকা পরে যেতে পারে। কারণ রুশ সেনারা এখন উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ, তিন দিক থেকে ডনবাসকে ঘিরে ধরতে শুরু করেছে।
বলতে গেলে রাশিয়ার কাছে এরই মধ্যে ডনবাস হারিয়েছে ইউক্রেন। কিন্তু এখন তারা আবারও এটি পুনরায় দখল নিতে চায়। বিবিসির সাংবাদিকরা ডনবাসের যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে জানিয়েছেন, সেখানে প্রতিরক্ষা পজিশনে অবস্থান করছে ইউক্রেনীয় সেনারা। তবে দিন দিন রাশিয়ার অস্ত্রের গর্জন ভারি হচ্ছে সেখানে। ২১ শতকের যুদ্ধ হলেও, এই যুদ্ধের কৌশলগুলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো বলে জানান তারা। সেখানে বিভিন্ন ছকে পরিখা খনন করেছে ইউক্রেনের সেনারা। পরিখার মধ্যে বসেই পেরিস্কোপের মাধ্যমে রুশ সেনাদের অবস্থান দেখছে তারা। ৫২ বছর বয়স্ক ইউক্রেনীয় সেনা আনাতলী বলেন, আমি এখন রাশিয়ানদের দেখতে পাচ্ছি, তারা দেখতে আমার মতোই। তবে তারা যদি আমার পজিশন দখল করতে চায় আমি তাদেরকে মেরে ফেলবো।
আমি যদি তাদেরকে না মারি, তাহলে তারা আমাকে মেরে ফেলবে। এটাই যুদ্ধের নিয়ম। সেখানে ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝা গেছে, তারা বিশ্বাস করে তাদের এই প্রতিরক্ষা পদ্ধতি রাশিয়ার অগ্রসরকে থামিয়ে দেবে। যুদ্ধ জয়ের বিষয়ে তারা আত্মবিশ্বাসী।
২৭ বছর বয়সী সেনা আন্দ্রেজ বলেন, আমাদের ভাল অস্ত্র আছে, ভাল দুর্গ আছে। রাশিয়া যদি এখানে আক্রমণ করে তাহলে তারা হারবে। তাদের কাছে জ্যাভেলিনের মতো এন্টি-ট্যাংক মিসাইল রয়েছে বলে জানান তারা। এ জন্য পশ্চিমাদের প্রতি তারা কৃতজ্ঞ। আন্দ্রেজ বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন একজন সাইকো এবং রাশিয়ার সেনাদের মরদেহ ইউক্রেনের মাটির জন্য ভাল সার হিসেবে কাজে দেবে।