যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের ‘লুজার’ এবং ‘সাকারস’ বলে অবমাননা করা নিয়ে মার্কিন মুলুকে যখন তোলপাড় চলছে, তখন দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক জেফ্রে গোল্ডবার্গ বলেছেন- সবেমাত্র শুরু এ কাহিনীর। আরও অপেক্ষা করছে। সবেতো একটি আইসবার্গ বা বরফ চাঁইয়ের শীর্ষভাগ দেখা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ফ্রান্স সফরকালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের। কিন্তু অফিসিয়ালি খারাপ আবহাওয়ার অজুহাতে তিনি ওই সমাধিতে যান নি। উল্টো তিনি নিহত সেনাদের ‘লুজার’ এবং ‘সাকারক’ বলে অভিহিত করেন বলে প্রথম খবর প্রকাশ করে দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিন। এ নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কড়া সমালোচনা করা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। আটলান্টিকের পর এ বিষয়ে অন্যদের পাশাপাশি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ফক্স নিউজ। কেন খবর প্রকাশের আগে এ বিষয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য নেয়া হয় নি, এ জন্য রিপোর্টারের চাকরিচ্যুতি করা উচিত বলে ফক্স নিউজের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন ট্রাম্প। রোববার ওই রিপোর্টের জন্য ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের’ উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আটলান্টিক প্রধান সম্পাদক গোল্ডবার্গ। তিনি সিএনএনের প্রধান মিডিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি ব্রায়ান স্টেলটারের কাছে বলেন, আমি আশা করছি এ নিয়ে আরো বেশি রিপোর্ট আসছে। সামনের দিন এবং সপ্তাহগুলোতে আরো তথ্যবহুল এবং নতুন নতুন তথ্য নিয়ে রিপোর্ট আসছে। আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। তিনি (ট্রাম্প) যা বলেছেন, আমরা তা প্রকাশ করতে যাচ্ছি। চারটি অজ্ঞাত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন রিপোর্ট প্রকাশ করার কারণে ট্রাম্প ও অন্য আরো অনেকের তোপের মুখে রয়েছে দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিন। কিন্তু গোল্ডবার্গ বলেছেন, রুদ্ধদ্বার বা ক্লোজড ডোরের ভিতরে যেসব ঘটনা ঘটে সে বিষয়ে এভাবেই রিপোর্ট করে মিডিয়া। আমরা সবাই সূত্র গোপন রেখেছি, বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সক্রিয়ভাবে ভীতির এক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। সূত্র সম্পর্কে গোল্ডবার্গ বলেন, সূত্রের নাম প্রকাশ না করার সম্পাদকীয় নীতি আছে তাদের। তবে যেসব সুত্রকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, তারা নামহীন নন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুসন্ধানী রিপোর্টে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি রিপোর্ট ফাঁস করেছিলেন সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টেইন। সেই রিপোর্টের কারণে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে। রিলায়্যাবল সোর্সেস বা নির্ভরশীল সূত্রের বিষয়ে রোববার স্টেলটারকে কার্ল বার্নস্টেইন বলেছেন, মাঝে মধ্যে সাংবাদিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে ওঠেন নাম প্রকাশে অনাগ্রহী সূত্র। তার ভাষায়, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রায় ২০০ রিপোর্টের প্রায় সবটাতেই ব্যবহার করা হয়েছিল অজ্ঞাত সূত্র। ট্রাম্প যুগেও অজ্ঞাত সূত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে। এটাই সত্য উদঘাটনের একমাত্র উপায়।
বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিষয়ে বার্নস্টেইন বলেন, আমাদেরকে এটা মেনে নিতে হবে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রেসিডেন্সি সম্পর্কে প্রায় সব সত্যই আমরা জানি। এসব বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন রিপোর্টে। প্রেসিডেন্টের খবর হলো ‘ভুয়া খবর’। কিন্তু সাংবাদিকরা যথার্থই রিপোর্ট করছেন।
ওদিকে এমন রিপোর্ট করার কারণে দ্য আটলান্টিককে সরাসরি আক্রমণে পরিণত করেছেন ট্রাম্প। এ কোম্পানির সংখ্যাগরিষ্ঠ মালিক লরেন্স পাওয়েল জবসকে কিনি আক্রমণ করে কথা বলেছেন। ট্রাম্প টুইটে বলেছেন, র্যাডিক্যাল লেফট ম্যাগাজিনে যেভাবে অর্থ অপচয় করছেন তার স্ত্রী, তা জেনে নিশ্চয় স্টিভ জবস খুশি হবেন না। এই ম্যাগাজিনটি পরিালনা করেন একজন বিরুদ্ধব্যক্তি (গোল্ডবার্গ) এবং তারা ফেক নিউজ এবং ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে। স্টিভ জবকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প লিখেছেন, তাকে কল করুন, তাকে লিখুন- আপনার অনুভূতি কেমন হচ্ছে।
পাল্টা জবাব দিয়েছেন গোল্ডবার্গ। তিনি বলেছেন, তার ম্যাগাজিন ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে এধারায় অব্যাহতভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করে যাবে। তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ভীতি থেকে ভয় পাব না। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো।