জীবনযাত্রার লাগামহীন ব্যয় বৃদ্ধিতে মানুষ যে কতটা কষ্টে আছে, তা বোঝা যায় সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখে।
একটু কম দামে পণ্য কিনতে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। বর্তমানে টিসিবির ১৫০টি ট্রাক রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পণ্য বিক্রি করছে। জানা গেছে, টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য ক্রয় করতে এসে অনেকেই খালি হাতে ফিরে যান।
দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর খালি হাতে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি দরিদ্র মানুষ সহজে মেনে নিতে পারে না। যেহেতু টিসিবির ট্রাকের পণ্য ক্রয়ের দীর্ঘ লাইনে এখন নিুবিত্তের পাশাপাশি মধ্য আয়ের মানুষও দাঁড়ায়, সেহেতু এ ট্রাকের সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার।
চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে রাজধানীতে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম ২৪ মার্চ পর্যন্ত এবং ২৭ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দুই পর্বে চলার কথা। ১৫ মার্চ থেকে সারা দেশেই টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহে টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে। পণ্য কিনতে এসে অনেকেই নিয়ম মানছেন না। অভিযোগ রয়েছে, সবল ক্রেতাদের ধাক্কাধাক্কিতে বয়স্করা ট্রাকের কাছে যেতে পারছেন না। তাছাড়া অনেকে জোরপূর্বক দুই থেকে তিনবার পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। এই বিশৃঙ্খলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে যে লক্ষ্যে টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সহযোগিতামূলক ভূমিকা কাম্য।
ট্রাকসেলের পণ্য ক্রয় করতে আসা কোনো বয়স্ক ও নারী ক্রেতাকে যাতে খালি হাতে ফিরে যেতে না হয় তাও নিশ্চিত করা দরকার। টিসিবির ট্রাক কবে কোন জায়গায় থাকবে, তা না জানার কারণে ক্রেতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব সমস্যার দিকেও কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।
কিছুদিন পরই শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। এ মাসে ইফতার ও সেহরির সময় যেসব খাদ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, টিসিবির উচিত সেসব পণ্য সরবরাহে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। যেসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলোর মান যাতে ভালো হয় তা নিশ্চিত করা না হলে টিসিবির এ কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
টিসিবির পণ্য যাতে কালোবাজারে বিক্রি হতে না পারে, সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি রাখতে হবে। টিসিবি হাতেগোনা কিছু পণ্য মাঝেমধ্যে খোলাবাজারে বিক্রি করে, যা বিশাল বাজারব্যবস্থায় তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। তাই তাদের পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করি আমরা।