Wednesday, March 22, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামঝুঁকিতে দেশের অর্থনীতি

ঝুঁকিতে দেশের অর্থনীতি

মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় এক বড় সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। ফলে বেড়েছে পণ্যের মূল্য। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের মতো জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশের অর্থনীতিতে সম্প্রতি নতুন ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ও জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে চলেছে লাগামহীনভাবে। করোনার আগে ২০১৯ সালে দেশে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমান রিজার্ভ থাকলেও সম্প্রতি রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার; যা দিয়ে ৫ মাসেরও কম সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক কোনো কোনো নিরাপদ মানদণ্ড অনুযায়ী কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই তাকে নিরাপদ ধরা হয়। তবে মনে রাখা দরকার, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে নতুন সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

সম্প্রতি আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় ও মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে চাপ বেড়েছে। এই অবস্থায় রিজার্ভ বেশি থাকলে, ব্যাংকে তারল্য প্রবাহ পর্যাপ্ত হলে, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ ও ঋণপ্রবাহ চলমান থাকলে ঝুঁকি মোকাবিলা সহজ হতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে, এটা যেহেতু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, সেহেতু দেশের বিনিয়োগ ও নতুন কর্মসংস্থানে কখন কাঙ্ক্ষিত গতি আসবে, এ বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কম থাকায় তা দিয়ে আমদানিসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে ডলারের জোগান দিতে হচ্ছে। জানা গেছে, সার্বিকভাবে ঋণপ্রবাহ বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিনিয়োগে মন্দা পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকায় দেশের অর্থনীতিতে ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতাও কমছে। এদিকে আমদানি ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি কমেছে। এ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণে জোর দেওয়ার পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি শিল্প খাতকে চাঙ্গা করে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশের দরিদ্রপ্রবণ এলাকাগুলোতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটানোর লক্ষ্যে শ্রমনির্ভর রপ্তানিপণ্যের পরিবর্তে মেধানির্ভর রপ্তানিপণ্যে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে অর্থনীতিতে ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments