বাবরির পর জ্ঞানবাপীও হারাতে চাই না : আসাদউদ্দিন ওয়াইসি
ভারতের শুরু বারাণসীর বিতর্কিত জ্ঞানবাপী মসজিদের ভিডিও সার্ভে। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মসজিদ চত্বরের ৫০০ মিটারের মধ্যে সমস্ত দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার বিতর্কিত মসজিদটির ভিডিও সার্ভের উপর স্থগিতাদেশ জারি করতে রাজি হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তারপরই আজ পুরোদমে কাজ শুরু হতে চলেছে। গতকাল শীর্ষ আদালতে মসজিদে সার্ভে বন্ধ করার দাবি জানান প্রবীণ আইনজীবী হুজেফা আহমদি। কিন্তু ‘অঞ্জুমান ইনতেজামিয়া মসজিদ কমিটি’র তরফে করা সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি।
প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা বলেন, আমরা এই মামলার নথি খতিয়ে দেখিনি। বিষয়টা যে ঠিক কী, সেটাই আমরা জানি না। তাই আমি কীভাবে কোনো নির্দেশ দেব? আগে আমি সমস্ত নথি খতয়ে দেখি তারপর এই বিষয়ে শুনানি হবে।
উল্লেখ্য, জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে মা শৃঙ্গার গৌরীস্থলে পুজো করার আবেদন জানিয়েছিলেন পাঁচজন নারী। গত এক বছর ধরেই ওই অঞ্চলটি খুলে দেয়া হয়েছে প্রার্থনা করার জন্য। কিন্তু ওই নারীদের আবেদন ছিল, তারা চান ওই পুরনো মন্দির চত্বরের অন্যান্য দেববিগ্রহের সামনেও প্রার্থনা করতে। গত এপ্রিলে এই বিষয়ে একটি তদন্তের নির্দেশ দেয় বারাণসী আদালত।
কয়েক দিন আগেই মসজিদের ভেতরে শুরু হয়েছিল ভিডিও সার্ভে। কিন্তু এই ভিডিও সার্ভেতে আপত্তি তোলেন মসজিদ কমিটির সদস্য ও তাদের আইনজীবীরা। তারা জানান, মসজিদের মধ্যে কোনো রকম ভিডিওগ্রাফি করা যাবে না। কিন্তু পিটিশন দাখিলকারীদের আইনজীবীরা বলেন, তারা যা করছেন আদালতের নির্দেশ মেনেই। বৃহস্পতিবার সেই মামলারই শুনানি ছিল বারাণসী আদালতে। সেখানে ভিডিও সার্ভে অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। তারপর সুপ্রিম কোর্টে যায় মসজিদ কমিটি।
প্রসঙ্গত, কাশী বা বারাণসীর বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দিরের গায়েই রয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদ। ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, একাধিকবার বিদেশী হানাদারদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মন্দিরটি। ১৬৬৯ সালে মূল মন্দিরটি দখল করে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করেন মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব। এখনো মসজিদের দেয়ালে হিন্দু দেব-দেবীর ছবি দেখা যায়। অষ্টাদশ শতকে হিন্দুদের আবেগকে মান্যতা দিয়ে মসজিদের কাছেই আজকের বিশ্বনাথ মন্দিরটি তৈরি করেন মারাঠা রাজ্য মালওয়ার রানি অহল্যাবাই হোলকর।
বাবরির পর জ্ঞানবাপী মসজিদও হারাতে চাই না : আসাদউদ্দিন ওয়াইসি
ভারতের উত্তর প্রদেশের কাশিতে অবস্থিত জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে ক্রমেই বিতর্ক দানা বাঁধছে। এই আবহে এবার এই মসজিদ নিয়ে বারানসীর আদালতের রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি।
বৃহস্পতিবার জ্ঞানবাপী মসজিদের রায়কে উপাসনা স্থান আইন ১৯৯১-এর ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেন হায়দারাবাদের এই সংসদ সদস্য। পেশায় আইনজীবী ওয়াইসির স্পষ্ট বক্তব্য, আইন অনুসারে কোনো ব্যক্তি কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাসনালয় বা তার কোনো অংশকে ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়ে রূপান্তর করতে পারবেন না। এরই ভিত্তিতে ওয়াইসির প্রশ্ন, তাহলে কেন এই সমীক্ষা করা হচ্ছে?
ওয়াইসি বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত (জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলায়) বাবরি মসজিদ বিতর্ক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের লঙ্ঘন। ওয়াইসি জোর দিয়ে আরো বলেন, যে তিনি বাবরি মসজিদের পরে আরো একটি মসজিদ হারাতে চান না। তার দাবি, ‘এটি স্পষ্টভাবে আইনের লঙ্ঘন। আমি আশা করি-অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড এবং মসজিদ কমিটি সুপ্রিম কোর্টে যাবে। আমি একটি বাবরি মসজিদ হারিয়েছি এবং আমি আরো একটি মসজিদ হারাতে চাই না।’
এর আগে বৃহস্পতিবার বারানসীর একটি আদালত নির্দেশ দেয়, যেন জ্ঞানবাপী মসজিদ সমীক্ষা শেষ করে সেই রিপোর্ট ১৭ মে-এর মধ্যে পেশ করা হয়। আদালত জেলা প্রশাসনকে অজুহাত দেখিয়ে সমীক্ষায় বিলম্ব না করার নির্দেশ দিয়েছে। এরপরই এই সমীক্ষা ঘিরে বিতর্ক আরো বাড়ল। উল্লেখ্য, দিল্লির বাসিন্দা রাখি সিং, লক্ষ্মী দেবী, সীতা সাহু এবং অন্যান্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বারানসী জেলা আদালতের নির্দেশে এই সমীক্ষা চালানো হচ্ছে।
এর আগে সমীক্ষা ও ভিডিয়োগ্রাফির সময় বারানসীর জ্ঞানবাপী-শ্রীঙ্গার গৌরী কমপ্লেক্সের খুব কাছেই দুটি স্বস্তিকের চিহ্ন দেখা যায় বলে দাবি করেছিলেন সমীক্ষার ভিডিওগ্রাফার। কোর্ট কমিশনারের দলের ভিডিওগ্রাফাররা বলেন, যে তারা সমীক্ষা চালনোর সময় মসজিদের বাইরে দুটি আবছা কিন্তু সুস্পষ্ট স্বস্তিক চিহ্ন দেখতে পান।
তাদের দাবি, স্বস্তিকগুলো সম্ভবত প্রাচীনকালে তৈরি হয়েছিল। এই দাবির ভিত্তিতেই উত্তেজনা ছড়ায়। পরে বিক্ষোভের মুখে সমীক্ষা স্থগিত রাখা হয়। এরপরই মুসলিম পক্ষ কমিশনারের অপসারণের দাবি জানায়। তবে আদালত কমিশনার বদলের আর্জি খারিজ করে। উল্টো দ্রুত সমীক্ষা সম্পন্ন করে রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।