Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকজেলখানা নয়, সেনা-আধাসেনার ধর্ষণের আখড়া

জেলখানা নয়, সেনা-আধাসেনার ধর্ষণের আখড়া

সুদানে সেনা-আধাসেনা দ্বন্দ্ব প্রতিনিয়ত পিষ্ঠ হচ্ছে সাধারণ জনগণ। ঘরে-বাইরে সবখানেই নিরাপত্তাহীনতা। চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুই দলের অস্থায়ী সব আটককেন্দ্রে। চালানো হচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। আটককেন্দ্রগুলো রীতিমতো হয়ে উঠেছে ধর্ষণের আখড়া। তরুণ নারী ও পুরুষ উভয়ই সহিংসতার শিকার হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর পর (১৫ এপ্রিল) থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত ৫০টি নতুন অবৈধ আটককেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আটককেন্দ্রে অবাধে চলছে অপহরণ, বেআইনি গ্রেফতার, জোরপূর্বক শ্রম এবং অনাহার। বন্দি, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর এসব অত্যাচারের বিষয় তুলে ধরেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি-স্কুল, থানা, মসজিদ-হাসপাতাল এবং অন্যান্য বেসামরিক ভবনে অগণিত অস্থায়ী আটককেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে যৌন দাসত্বে ব্যবহারের জন্য নারীদের অপহরণ করার অভিযোগ উঠে এসেছে। আইনজীবীদের তথ্যানুযায়ী একজন বলেছিলেন, তার দুই মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের দক্ষিণ দারফুরের নিয়ালায় নারী ও মেয়েদের জোরপূর্বক গুম করার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা সিভিএডব্লিউর প্রধান সুলিমা শরিফ ইশাগ বলেন, ‘উম আলনাইম এক মা প্রকাশ করেছেন তার দুই ছেলেসহ আরএসএফের অন্য সৈন্যরা খার্তুম থেকে আট মেয়েকে অপহরণ করেছে। পরে তাদের জোরপূর্বক যৌনতার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।’ ইশাগ আরও বলেন, ‘দক্ষিণ দারফুরের কালমা আইডিপি ক্যাম্পে যৌন সহিংসতার ১২টিরও বেশি রিপোর্ট রয়েছে। ভুক্তভোগীরা সবাই অভিযোগ করেছেন যে তাদের আক্রমণকারীরা আরএসএফ বাহিনীর সদস্য। এমনকি জুলাই মাসে দেশটিতে ১২ বছরের কম বয়সি শিশু ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। একই মাসে দারফুরের নিয়ালায় ২৪ জন নারী ধর্ষণের খবর রিপোর্ট করা হয়। নিয়ালার আলদামান হোটেলে আটক তরুণীদের দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ ও সেনাবাহিনী সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়াই শতাধিক নাগরিককে আটক করেছে। ভুক্তভোগী একজন ২৩ বছর বয়সি মনিম আহমেদ জানান, পূর্ব খার্তুমের বিমানবন্দরের কাছে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেসের একটি অফিসে তাকে কয়েকদিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তিনি বলেন, ‘যখন আমি আমার পরিবারের জন্য রুটি কিনতে গিয়েছিলাম তখন আমাকে গ্রেফতার করা হয়। আমাকে অন্য বন্দিদের সঙ্গে একটি আরএসএফ গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেনারা আমাদের লাথি মারে এবং গাড়ির ভেতরে বেত্রাঘাত করতে থাকে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ভাই বলেন, ‘আরএসএফ সৈন্যরা আক্রমণ করে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। তারা আমাদের হুমকি দেয় এবং তারপর দুই সপ্তাহের জন্য আমাদের সঙ্গে বাড়িতে থাকে। আমরা আমাদের বাড়িতে প্রায় ১০ জন আরএসএফ সৈন্যের সঙ্গে থাকতাম। তারা আমাদের বাইরে যেতে বা খাবার তৈরি করতে দেয়নি। তারা আমাদের দিনে একবেলা খাবার দিয়েছে, আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।’ বেসামরিক মানুষের ওপর গণহত্যাও চলছে সমান তালে। সুদানের রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা লাশের সংখ্যা বাড়ছে। আরএসএফ পশ্চিম দারফুরের কাছাকাছি একটি সেনাঘাঁটিতে হামলার পর ২ নভেম্বর বাস্তুচ্যুতদের একটি শিবির ঘেরাও করে। হত্যাকাণ্ড চালায় সেখানেও। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, আরএসএফের প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ২  হাজার। নিখোঁজ রয়েছে ৩১০ জন। অ্যাক্টিভিস্টদের মতে, সাম্প্রতিক নৃশংসতা আরএসএফ এবং তার সহযোগী মিলিশিয়াদের পশ্চিম দারফুর থেকে অ-আরব মাসালিত উপজাতি নির্মূল করার একটি বিস্তৃত প্রচারণার অংশ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments