Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামজামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমাতে হবে

জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমাতে হবে

বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি যেকোনো দেশের জন্য অমর্যাদার বিষয়। যে সমাজে আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটে সে সমাজে সভ্যতা বিকশিত হয় না। আমাদের দেশে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে এবং হচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক গায়েবী মামলায় হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ কলুষিত করে তুলেছে। যত দিন যাচ্ছে, আদালতে ততই মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের আদালতগুলোতে ৩০ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন। চলমান গতিতে মামলা চলতে থাকলে তা কবে নাগাদ নিষ্পত্তি হবে, তা বলা মুশকিল। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, অর্ধশত বছরেও এসব মামলার নিস্পত্তি করা সম্ভব নয়। প্রবাদ রয়েছে, ‘জাস্টিস ডিলেইড জাস্টিস ডিনাইড’ ,অর্থাৎ বিচার প্রার্থীর আর্জি যত প্রলম্বিত হবে বিচার পাওয়া ততই দুস্কর হবে। ডিজিটালাইজড ব্যবস্থায় সব ক্ষেত্রে যতই গতিশীলতা আসছে, আমাদের বিচারব্যবস্থা যেন তার সাথে তাল মেলাতে পারছে না। বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মাহামারির সময় সোশ্যাল ডিসট্যান্স বাধ্যবাধকতার কারণে আদালতের কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা আরোপের পাশাপাশি ভার্চুয়াল শুনানির নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। সেখানে একটি আবেদনে মামলায় আগাম জামিন প্রার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০ জনে সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। বর্তমানে কোভিডকালীন পরিস্থিতি না থাকলেও সে সময়কার নির্দেশনা এখনো বহাল থাকায় আসামি বিচারপ্রার্থীদের অশেষ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় শত শত মানুষকে অভিযুক্ত করা হলেও একটি আবেদনে সর্বোচ্চ ১০ জনের নাম সীমাবদ্ধ থাকায় মামলার কোর্ট ফি খরচ, সময়সহ অতিমাত্রায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।

সরকার ও প্রশাসন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। দেশে আইনের শাসন তথা সুশাসন নিশ্চিত করা সরকারের সামাজিক-রাজনৈতিক দায়িত্ব। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যত্যয় ও অস্বচ্ছতা বিচারহীরহীনতার অপসংস্কৃতির জন্ম দেয়। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচার বিভাগের নিরপেক্ষ ও জনবান্ধব ভূমিকা ছাড়া স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রে সরকারের বিরোধিতা ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পুলিশি হামলা-মামলা দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করা হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সুনাম যেমন আছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্যের দলীয় ভূমিকা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পেছনে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করা হয়। এক্ষেত্রে, বিরোধীদল ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আদালতই হচ্ছে শেষ আশ্রয়স্থল। নিরপরাধ মানুষের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় ভোগান্তির বিপরীতে আদালতের কার্যকর ভূমিকা পালন স্বাভাবিক। যেখানে একই মামলায় শতশত মানুষকে এজাহারভুক্ত আসামী করা হচ্ছে, সেই সাথে কোনো কোনো মামলা হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মানুষের মধ্যে ভীতিকর অবস্থা তৈরী করা হচ্ছে, সেখানে আদালতে একটি আগাম শুনানি আবেদনে ১০ জনের নাম সীমাবদ্ধ রাখা সমীচিন নয় বলে আইনজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এ সংখ্যা অধিক করা প্রয়োজন।

গতকাল একটি ইংরেজী দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, করোনাকালে আদালতে জারি করা নির্দেশনা এখনো বহাল আছে, এ তথ্য সুপ্রীম কোর্টের মুখপাত্র অবগত নন। পরিবর্তিত বাস্তবতায় উচ্চ আদালত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে, এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কোভিডকালীন বাস্তবতা এখন নেই। ফলে আগের নির্দেশনা পরিবর্তন জরুরি। কারণ, দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় পুরনো ও নতুন গায়েবি মামলায় গণগ্রেফতার ও হাজার হাজার নতুন আসামীর জামিন পাওয়ার অধিকারকে নিশ্চিত করার বিষয়টি আদালতের বিবেচনায় থাকা আবশ্যক। জামিনের সই মুহুরি কপি, ডেসপাচ খরচসহ আগাম জামিন আবেদনের জন্য কিছুদিন আগেও যেখানে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ লাগতো, এখন তা বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করার পাশাপাশি জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাও বাড়ছে। রাজনৈতিক মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের আগাম জামিনের সুযোগ না থাকায় এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের জন্য বিশেষ কনসেশন থাকা জরুরি। পরিবর্তিত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আদালতে জামিন প্রাপ্তির অধিকার এবং বিচারিক কার্যক্রম দ্রুতায়িত করতে উচ্চ আদালত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও আইনগত প্রতিকারের উদ্যোগ নেবে বলে আমরা আশা করি। রাজনৈতিক মামলায় আগাম জামিন লাভের ক্ষেত্রে একটি আবেদনে শতাধিক বা সর্বোচ্চ সংখ্যক নাম সংযুক্তির সুযোগ দেয়া হলে একদিকে সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগও কমে আসবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments