জান্নাতি ফল ডালিম; যে ফলের নাম পবিত্র কোরআনে একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ—যার কিছু মাচায় তোলা হয় আর কিছু তোলা হয় না এবং খেজুরগাছ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, জয়তুন ও আনার (ডালিম), যার কিছু দেখতে এক রকম আর কিছু ভিন্ন রকম। তোমরা তার ফল থেকে আহার করো, যখন তা ফল দান করে এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও আর অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৪১)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে এই ফলের কথাও উল্লেখ করেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সেখানে আছে ফলমূল, খেজুর ও ডালিম।’ (সুরা আর-রহমান, আয়াত : ৬৮)
ফলমূল ইত্যাদি মহান আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত। এগুলোর দ্বারা মহান আল্লাহ মানুষের যেমন আহারের ব্যবস্থা করেন, তেমনি এগুলোর মধ্যে মানুষের রোগ নিরাময়েরও বিভিন্ন ঔষধি গুণ দিয়ে রেখেছেন।
তাই সম্ভব হলে মাঝে মাঝে ফল খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। বিশেষ করে ডালিম ফলের আছে বিশেষ স্বাস্থ্য উপকারিতা। হেলথ লাইন ডটকম ও হেলথ বেনিফিটস টাইমসের আলোকে ডালিমের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো—
রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক রাখে : ডালিমের রসে ফ্রুক্টোজ থাকলেও এটি অন্য ফলের রসের মতো রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ডালিমের রস খেলে রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক থাকে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : শরীর থেকে মুক্ত ক্ষতিকর উপাদান কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এই মুক্ত উপাদান অন্যান্য রোগ সৃষ্টি করে। তাই রোগব্যাধি দূর করতে ডালিমের রস উপকারী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী গুণাগুণ আছে ডালিমে। শরীরের ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ডালিমের রস।
হিমোগ্লোবিন বাড়ায় : আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা (সামর্থ্য থাকলে) প্রতিদিন মাঝারি আকৃতির একটি ডালিম খাওয়ার চেষ্টা করা বা এক গ্লাস ডালিমের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ডালিম এমন একটি ফল যে তার খোসায়ও রয়েছে ঔষধি গুণ। আলী (রা.) বলেন, তোমরা খোসাসহ ডালিম খাও। কেননা তা পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৫/৯৯)। বর্তমান যুগের বিশেষজ্ঞদের মতেও ডালিম হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ডালিমে আছে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ। দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরনের আঁশ থাকায় এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের নড়াচড়া নিয়মিত করে।
এ ছাড়া ডালিমের খোসায় প্রচুর পরিমাণে এলাজিক এসিড আছে, যা ত্বকের বলিরেখা দূর করে। অন্যদিকে এতে ১০০ গ্রামেরও বেশি ভিটামিন সি আছে, যা ত্বককে সুস্থ ও তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর এর জিংক ও কপার নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, ব্রণ দূর করে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে। এ কারণে অনেকে ডালিমের খোসা গুঁড়া করেও বাজারজাত করছে। তবে এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এমনকি কোনো বিশেষ উপকারিতা লাভের জন্য ডালিম খেতে চাইলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতি জেনে নিতে হবে।