Monday, March 27, 2023
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকজাতিগত ৩ সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার

জাতিগত ৩ সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার

বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে নির্বাচন করার জন্য জাতিগত সশস্ত্র তিনটি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। এই আলোচনায় যে তিনটি গ্রুপ অংশ নিচ্ছে তার একটির মুখপাত্র এ তথ্য দিয়েছেন আল জাজিরাকে। তার দেয়া তথ্যমতে, শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি (এসএসপিপি), ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি (ইউডব্লিউএসপি) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মির (এনডিএএ) সঙ্গে তিনদিনের আলোচনা চলছে রাজধানী ন্যাপিডতে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। তারপর থেকে মিয়ানমারজুড়ে সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহীরা। তবে আলোচনায় অংশ নেয়া এই তিনটি গ্রুপ সেই লড়াই থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেছে। 

উত্তরাঞ্চলের শান রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করে এসএসপিপি। এর এক মুখপাত্র বলেছেন, আমাদের এলাকায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে অনুরোধ জানিয়েছে সেনাবাহিনী। আমাদের দিক থেকে আমরা তাদের নির্বাচনে বাধা দেবো না। একই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালিত গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারও এই বৈঠকের বিষয়ে রিপোর্ট করেছে।

তবে বৈঠকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ইউডব্লিউএসপির মুখপাত্র। 
ইউডব্লিউএসপির সামরিক শাখা ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মির (ইউডব্লিউএসএ) আছে প্রায় ২৫০০০ সদস্য। তাদেরকে বিশ্বে রাষ্ট্রীয় নয় এমন সবচেয়ে বৃহৎ শক্তির অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউডব্লিউএসএ’র নিয়ন্ত্রণে আছে চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের উত্তরের সীমান্তে শান রাজ্য। এই রাজ্যের প্রতিটি পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন সদস্যকে নিয়ে গড়ে উঠেছে তাদের নিজস্ব বাহিনী ইউডব্লিউএসএ। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা গত মাসে ক্ষুদ্র ৫টি বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। পরে তারা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এতে জান্তা সরকারের নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার কথা বলেছে তারা। মিয়ানমারে প্রায় ২০টি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী আছে। তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে। আবার তাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে দশকের পর দশক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ ছাড়া মাদক ও প্রাকৃতিক সম্পদের লোভনীয় ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করে। এসব করেই তারা আন্দোলনের অর্থ সংগ্রহ করে। 

বুধবার ছিল মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবস। এদিন সামরিক জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং ভাষণ দেন। এতে তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা দ্বিগুন করেন। তবে কখন সেই নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। একটি নির্বাচন হলে তাকে দেখা হবে সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় থাকাকে স্বাভাবিকীকরণ হিসেবে। অর্থাৎ নির্বাচন হলে জেনারেলরা ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবেন। এই নির্বাচনে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে সেনাবাহিনী। তার আগে তারা গত দুটি বছর ব্যয় করেছে বিশ্বাসযোগ্য যেকোনো বিরোধীদের দমন করতে। 

৫০ বছরের সামরিক শাসনের পর মিয়ানমারে এক দশকে দেশটি গণতন্ত্রের পথে যেটুকু অগ্রগতি করেছিল, ২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করে তাকে উল্টে দিয়েছে সেনাবাহিনী। এরপর হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক রাখা হয়েছে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সুচিকে। সেনাবাহিনী তাকে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে। তাকে দুর্নীতির অভিযোগে আদালত ৩৩ বছরের জেল দিয়েছে। তার সমর্থক ও নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলেন, সুচির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে তার সুনামকে নস্যাৎ করতে এবং সেনাদের শাসনের অধীনে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য। কিন্তু সেনাবাহিনী তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে তাদের ক্ষমতা দখলকে জায়েজ করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ২০২০ সালে সর্বশেষ যে বহুদলীয় নির্বাচন হয়, তাতে সুচির দল ভূমিধস জয় পায়। এই নির্বাচনে জালিয়াতি, অনিয়মের যে অভিযোগ সেনারা করছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা তার সঙ্গে একমত নন। তারা বলছেন, ওই নির্বাচনে বড় কোনো অনিয়ম হয়নি। 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments