পবিত্র রমজানের অনুষঙ্গ ‘জাকাত’ একটি আর্থিক ইবাদত। ঐতিহ্যগতভাবে অনেকেই বেশি সওয়াবের আশায় ‘রমজান থেকে রমজান’ হিসাবে বছর ধরে জাকাত আদায় করে থাকেন।
ইসলামের পঞ্চভিত্তির অন্যতম জাকাত, একটি ‘সামাজিক বীমা’ এবং শোষণ-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুদবিহীন সমাজ বিনির্মাণের বাহন। ২.৫ শতাংশ জাকাত দানে ৫ শতাংশ হারে দারিদ্র্য হ্রাস সম্ভব।
জাকাত নির্ধারণী একককে ‘নিসাব’ বলে। স্বর্ণ, রৌপ্য ও নগদ অর্থকে একক নির্ধারণ করে জাকাত ধার্য করে তা থেকে ২.৫ শতাংশ বা প্রতি এক লাখ টাকায় দুই হাজার ৫০০ টাকা জাকাত আদায় করা ফরজ।
জাকাতের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের অনগ্রসর মানুষের সামর্থ্যকে ঃধশব ড়ভভ ষবাবষ- এ পৌঁছানো। অথচ বর্তমানে ‘সস্তা শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণে’র প্রচলিত মহড়ায় ‘দারিদ্র্যকে মহান’ করে আত্মপ্রচার, রাজনৈতিক পরিচিতি, ভোট বাণিজ্য ইত্যাদি প্রয়োজনে জাকাতের ধর্মীয় আবেদন হারিয়ে তা হয়ে যায় লোকাচারের লৌকিক আকাঙ্ক্ষাসর্বস্ব ‘লোক দেখানো’র জাগতিকতা মাত্র।
জাকাত বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ইচ্ছা ও স্বাধীনতা আছে সত্য। অন্যদিকে ‘সস্তা শাড়ি-লুঙ্গি’র জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে কারো যেন মৃত্যু না হয় তা বিবেচনায় রাখা জরুরি এবং জাকাত বণ্টনব্যবস্থায় আধুনিকায়ণের জন্য প্রয়োজন—
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে প্রধান করে ‘জাকাত বোর্ড’ গঠন এবং ‘জাকাত বোর্ড’ কর্তৃক জাকাত সংগ্রহ তৎপরতা বৃদ্ধি করা। ব্যাংকে জাকাতের অর্থ জমা প্রদানে জনগণকে উৎসাহিত করা।
এলাকাভিত্তিক ও মসজিদকেন্দ্রিক ‘জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটি’ গঠন। মসজিদের ইমাম, বয়োজ্যেষ্ঠ স্থায়ী মুসল্লি, হাজি, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সমাজস্বীকৃত শ্রদ্ধাভাজন অভিজাত ব্যক্তি হবেন জাকাত কমিটির সদস্য।
দেশে বিদ্যমান দ্বিনি প্রতিষ্ঠান, এতিমখানার ‘লিল্লাহ বোর্ডিং’ বা ‘গোরাবা তহবিলে’ জাকাতের অর্থ প্রদান উৎসাহিত করা এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও আধুুনিকায়ণ নিশ্চিত করা। ব্যক্তিগত, সামাজিক, সাংগঠনিক উপায়ে প্রকৃত অভাবী মানুষ শনাক্তকরণ ও দুস্থদের তালিকা প্রস্তুতকরণ। বিপুল পরিমাণ জাকাত বণ্টনে ‘জাকাত বোর্ড’ বা রাষ্ট্রীয় তদারকি।
জাকাত বিতরণের লক্ষ্য স্থির করা, এতে দারিদ্র্য বিমোচনে কত দূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব তা বিবেচনায় রাখা। কী কী জিনিস দিয়ে জাকাত দেওয়া হবে বা কাকে কাকে দেওয়া হবে তা স্থির করা।
ব্যক্তির প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সম্পদের জাকাত নির্ধারণ। অধিক পরিমাণ জাকাত বিতরণের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহায়তা নেওয়া। মনে রাখতে হবে নিরাপদে ও সযত্নে গ্রহীতার কাছে জাকাত পৌঁছানো ব্যক্তির একান্ত কর্তব্য। জাকাত দানের মাধ্যমে কর্মসংস্থান, স্বাবলম্বীকরণ, অর্থের গতিশীলতা নিশ্চিতকরণ, শ্রেণিসংগ্রাম ও বৈষম্য হ্রাস ইত্যাদি লক্ষমাত্রা স্থির করে অগ্রসর হতে হবে। ‘জাতীয় জাকাত দিবস’ বা ‘জাকাত সপ্তাহ’ পালন। প্রয়োজনে সারা বছর বণ্টনব্যবস্থা অব্যহত রাখা। মহান আল্লাহ আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় ঘটান।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর