কারাগারে হামলা চালিয়ে সেখানে বন্দি জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে যে ফোনটি এসেছিল, সেটির উৎস চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল বা ভিওআইপি ব্যবহার করে দেশের বাইরে থেকে ওই কলটি করা হয়েছিল। যদিও এতে কলারের ফোন নম্বর হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিফোন অপারেটর সংস্থা টেলিটকের একটি নম্বর প্রদর্শিত হয়। এ নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে বলে জানা গেছে জঙ্গি দমনে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে।
এদিকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়ে লালমনিরহাট কারাগারে পাঠানো উড়ো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের কারাগারগুলোয় সতর্কতা জারি করেছে কারা অধিদপ্তর। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠনের কথাও বলা হয়েছে তাতে। জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকিকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া লালমনিরহাট জেলার কারাগারে বন্দি ২০ জঙ্গিকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে। এসব জঙ্গির মধ্যে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যরা রয়েছে।
যদিও জঙ্গি দমনে নিয়োজিত ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট, এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ও র্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, কারাগারে হামলা চালিয়ে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মতো সামর্থ্য এ মুহূর্তে জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেই। তবে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ফোনকলকে হালকাভাবে দেখছেন না তারা। এ বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থানে তারা খুবই সতর্ক রয়েছেন বলে জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সব কারাগার মিলিয়ে বর্তমানে ৫৫৬ জঙ্গি বন্দি আছে।
এ বিষয়ে এটিইউর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কোন বিষয়কেই আমরা হালকাভাবে দেখি না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির তিন সদস্যকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। এ ছাড়া ২০১৭ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী এলাকায় হামলা চালিয়ে কারাবন্দি হুজি নেতা মুফতি হান্নানকেও ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু তার আগেই বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেনে যাওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন এক কারাবন্দি পালিয়ে যায়। যদিও পরে তাকে হাতকড়াসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ দুটি ঘটনায় কারাগারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ কারণে কারাগারে নিরাপত্তা ঢেলে সাজানোর জন্য কারা মহাপরিদর্শক একটি চিঠি পাঠান দেশের সব কারাগারে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ডাকযোগে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে একটি চিঠি আসে। ওই চিঠিতে বলা হয়, কারাগারে থাকা তাদের সঙ্গী-সাথিদের তারা ছিনিয়ে নেবে। কিছুতেই আর তাদের ঠেকানো যাবে না। পরে একটি অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনেও জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার একই হুমকি দেওয়া হয়।
কারাগারে যে উড়ো চিঠি এসেছে, তা যাচাই হচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সম্প্রতি একটি কারাগার থেকে আসামি পালানোর ঘটনার পরই দেশের কারাগারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, একটি কারাগারে যে উড়ো চিঠি এসেছে, সেটা যাচাইয়ের জন্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে মানবিক দিক বিবেচনায় গত মার্চে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য তাকে মুক্তি দেয় সরকার। সেই মুক্তির মেয়াদ মঙ্গলবার আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে সরকার।
কারারক্ষীদের দুর্বলতার কারণে একজন আসামি সম্প্রতি পালিয়ে গেছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এমন প্রেক্ষাপটে দেশের কারাগারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’ লালমনিরহাট কারাগারে একটি উড়ো চিঠি এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই কারাগারে এমন চিঠি সব সময়ই আসে। তার পরও চিঠিটি যাচাইয়ের জন্য গোয়েন্দাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।’