একটি ২১ মাস মেয়াদের প্রকল্পে কর্মকর্তাদের ৪৬ মাসের বেতনের প্রস্তাবকে আমাদের কাছে অযৌক্তিক বলেই প্রতীয়মান হয়। উল্লেখ্য, ‘গ্লোবাল অ্যাকশন টু প্রিভেন্ট অ্যান্ড অ্যাড্রেস ট্রাফিকিং ইন পার্সন্স অ্যান্ড স্মাগলিং অব মাইগ্র্যান্টস বাংলাদেশ’ শীর্ষক ১৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকার এ প্রকল্পে এমন প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। শুধু এই একটি নয়, প্রস্তাবের আরও কিছু বিষয়কে আমাদের কাছে প্রকল্পের বিবেচনায় অস্বাভাবিক ও অসংগতিপূর্ণ মনে হয়েছে।
যেমন, ছোট এ প্রকল্পে একজন আউটসোর্সিং কর্মকর্তার জন্য বেতনের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্বভাবতই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসাবে উল্লেখ করা ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগ অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) এবং ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর ব্যাপারে ভেটো দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। কারণ বাস্তবায়নকারী হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো সংস্থাকে থাকতে হবে।
আমরা আগেও দেখেছি, বিভিন্ন প্রকল্পে অস্বাভাবিক প্রস্তাব করার পর পরিকল্পনা কমিশন তাতে আপত্তি জানিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে প্রকল্প ব্যয় কমানোও হয়েছে। তাহলে কেন কোনো প্রকল্পে অসংগতিপূর্ণ প্রস্তাব করা হয়? একটি প্রকল্প যখন চূড়ান্ত হয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) কাছে আসে, তখন তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় না। এর আগেই প্রকল্পের কোনো খাতে কোনো অসংগতি থাকলে তার নিরসন করা উচিত।
আমরা জানি, করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারের আয় কমেছে এবং ব্যয় বেড়েছে। ব্যয় সাশ্রয়ের চিন্তা থেকে ইতঃপূর্বে অন্তত ৫০০ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় বাহুল্য ব্যয় বাদ দিয়ে বা কমিয়েই যে কোনো প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া উচিত। অস্বাভাবিক বা অসংগতিপূর্ণ প্রস্তাব কাম্য নয়। অভিযোগ আছে, এ দেশে সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয় অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। অথচ আমাদের শ্রম তুলনামূলক সস্তা। সেক্ষেত্রে সড়ক নির্মাণ ব্যয় কেন বেশি, স্বভাবতই সে প্রশ্ন ওঠে। আমাদের সম্পদের পরিমাণ কম, কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। সেক্ষেত্রে অপচয় কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টিও সর্বজনবিদিত। দুর্নীতি আমাদের অন্যতম বড় সমস্যা। এটি কঠোরভাবে দমন করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার বিকল্প নেই। অনেক সময় দুর্নীতির উদ্দেশ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কাজেই এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি দিতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখতে হবে অবশ্যই। প্রকল্পের অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাব এলে অথবা উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ সহায়তার প্রকল্প প্রস্তাবে অযৌক্তিক শর্ত আরোপ করা হলে তা অনুমোদনের বিষয়টিও ভেবে দেখা উচিত বলে আমরা মনে করি।
২১ মাস মেয়াদের উল্লেখিত প্রকল্পটি যদিও সম্পূর্ণ অনুদানের অর্থে হবে, তারপরও তা নিয়মের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা উচিত। অপচয় হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তা রোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। মোট কথা, এ ক্ষেত্রেও জবাবদিহি থাকতে হবে।