Wednesday, March 22, 2023
spot_img
Homeজাতীয়চোখে পানি, মুখে হাসি: চাঁদ রাতে রিকশা হাতে বৃদ্ধ ছবেদ আলী

চোখে পানি, মুখে হাসি: চাঁদ রাতে রিকশা হাতে বৃদ্ধ ছবেদ আলী

সোমবার (২ মে) রাত পৌনে ১২টা। রাত পোহালেই ঈদ। সড়ক-মহাসড়ক প্রায় গাড়িশূন্য। এর মধ্যে আশুলিয়ার বাইপাইলে কিছু রিকশা দাড়িয়ে।

তার মধ্যে একজন সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তি। গায়ে সাদা জামা। পরনে লুঙ্গি। মুখে পান। নাম তার ছবেদ আলী। রিকশা হাতে যাত্রীর খোঁজে। অভাবের কারণে ঈদেও গ্রামের বাড়ি যেতে পারেননি। গ্রামে ছেলের সংসার ও নাতি-নাতনি। খুব ইচ্ছে ছিল গ্রামে তাদের সঙ্গে ঈদ করবে।

কিন্তু গ্রামের বাড়ির গাইবান্দার গোবিন্দগঞ্জের বড়দাও যেতে একজনের খরচই হাজার খানেক টাকা। খুব ইচ্ছে থাকলেও যাওয়া হয়নি। এমন কথা মনে করে কথার মাঝে ছলছল চোখে পানিগুলো হাসির মাঝে বার বার লুকানোর চেষ্টা ছবেদ আলীর। ততক্ষণে তাঁর মনের আক্ষেপ বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে চেহারায়।

ছবেদ আলী বলেন, অভাবের জীবনে ১৯৮৮ সাল থেকে রিকশাই হয়ে উঠেছে জীবিকার অবলম্বন। কৃষক বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া ছবেদ আলী ছোট বেলা থেকেই জীবন সংগ্রামের লড়াই করছেন। সংসারে এক ছেলে দুই মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে গ্রামে ভ্যানচালক। চায়ের দোকানি মেয়ের জামাইয়ের হাত ধরে আশুলিয়ায় আসা। তাও ১৬ বছর পার হলো। মেয়ে ও মেয়ের জামাই স্থায়ীভাবে গ্রামে চলে গেলেও আশুলিয়ায় রয়ে গেছেন বৃদ্ধ ছবেদ আলী ও তাঁর স্ত্রী ফিরোজা বেগম। সব ছেড়ে জীবিকার তাগিদে দুই বয়স্ক মানুষ এখন কঠিন শহরের বাসিন্দা। বৃদ্ধ শরীরের অসুখটা দেখা দেয় ঘন ঘন। ব্যথার ওষুধ নিয়মিত খেতে হয়।

তিনি আরো জানান, বসবাস করেন আশুলিয়ার ইউনিকে দাদা গার্মেন্টসের পাশে রিপন মিয়ার বাড়িতে। প্যাকেট (ছোট) রুমে ভাড়া মাসে ২ হাজার টাকা। রিকশার গ্যারেজের জন্য আলাদা টাকা। তবে তার চেয়েও কষ্টের ব্যাপার। আমার রিকশা যাত্রীরা তেমন উঠতে চায় না। বৃদ্ধ মানুষ তাই বলে চলে যায় যাত্রীরা। আবার কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে যাব না। পেছনে ঘুরে দেখি অন্য রিকশা নিয়ে চলে যায়।   অন্যরা দিনে ৫ থেকে ৬ শ টাকা ভাড়া পেলেও আমার হয় অর্ধেক টাকা। অটোরিকশার আগে প্যাডেল রিকশা চালাতাম। গত ৬ বছর আগে অটোরিকশা কিনেছি ১৪ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে। আবার গত দুদিন আগে রিকশার ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে নতুন করে ব্যাটারি কিনতে হলো। প্যাডেল রিকশা ভালো ছিল। শরীর ভালো ছিল। এখন অটোরিকশার কারণে শরীর আটকে গেছে। ব্যথা করে।

ছবেদ আলীর মতো জীবিকার তাগিদে অনেকেই কষ্ট আড়াল করে রাতের আঁধারে এভাবেই ঘুরে বেড়ায় এই শহরের বিভিন্ন সড়কে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments