Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeকমিউনিটি সংবাদ USAচীন ঠেকাতেই বছর গেল বাইডেনের

চীন ঠেকাতেই বছর গেল বাইডেনের

ফিরে দেখা ২০২১

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় বসেছেন চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘একলা চলো নীতি’র বিপরীত স্রোতে হাঁটার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি মধ্যবিত্তের জন্য সুগম ও মার্কিন স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে গেছেন। এই এক বছরে রাষ্ট্র পরিচালনায় তার লিখিত-অলিখিত মূলনীতিগুলোর মধ্যে ছিল-বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, মার্কিন নেতৃত্ব জোরদার, মার্কিন নেতৃত্বাধীন দীর্ঘতম যুদ্ধগুলোর অবসান, চীনের ক্রমবর্ধমান দৃঢ়তার প্রতি আরও ভালো প্রতিক্রিয়া দেখানো, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে স্থিতিশীলতা, ইরানের সঙ্গে যুগান্তকারী পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা, মেক্সিকোর সঙ্গে দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর ওয়াশিংটনের নীতিতে আরও মানবতার সন্নিবেশ ঘটানো। ২০২১ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন প্রকৃত মূল মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছে ওয়াশিংটন। বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বাইডেন হয়ে উঠেছেন একজন নেতৃস্থানীয় ‘কুশলী রাজনীতিবিদ’। কিন্তু মানবাধিকার নেতৃত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতির প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার সম্মুখীনও হয়েছেন তিনি। ২০২১ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির মূল পদক্ষেপগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মিত্রদের সঙ্গে পুনঃসম্পৃক্ততা : প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম দিন অফিসে বসেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পুনরায় যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এর মাধ্যমে তিনি অফিসের উদ্বোধনী দিনেই একটি ‘স্বতন্ত্র সম্পর্ক’ তৈরির ইঙ্গিত দেন। ট্রাম্প যথাক্রমে ২০১৭ এবং ২০২০ থেকে উভয় বিষয় থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

বাইডেন ট্রাম্পের দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতি পরিহার করে ন্যাটো মিত্রদের আশ্বস্ত করারও চেষ্টা করেছেন-তিনি তাদের সঙ্গে আছেন। এছাড়া উত্তর আমেরিকার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই দেওয়া, জাতিসংঘে মার্কিন নিযুক্তি পুনরুদ্ধার করা এবং ওয়াশিংটনকে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতা হিসাবে অবস্থান নেওয়া বাইডেনের কুশলী পররাষ্ট্রনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় বাইডেন ‘নিরলস’ মার্কিন কূটনৈতিক যুগের কল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তার ভাষায়, ‘যা ইতিহাসের পরিবর্তনের বিন্দুতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে শক্তিশালী করবে।’ আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশৃঙ্খল প্রত্যাহার প্রাথমিকভাবে বাইডেনের ওপর বিশ্বাস কিছুটা হলেও হারিয়েছে ওয়াশিংটন। প্রশ্ন উঠেছে, তার সিদ্ধান্তে সঠিক ছিল কি-না। অতি সম্প্রতি ইউক্রেনের সীমান্তে একটি রাশিয়ান সৈন্যদের অবস্থান নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেছিলেন বাইডেন, যা ন্যাটোর পূর্ব-অধিকাংশ সদস্যের উদ্বেগ ও ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চীনের সঙ্গে উত্তেজনা শীতল করার চেষ্টা : বাইডেন নভেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ভার্চুয়াল হলেও তার প্রথম শীর্ষ বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠককে বছরব্যাপী তৈরি হওয়া উভয় দেশের বাকযুদ্ধ এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাকে শীতল করার প্রচেষ্টা হিসাবে দেখেছেন পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষকরা। ২০১৮ সাল থেকে ওয়াশিংটন এবং বেইজিং এক ‘বাণিজ্য নেতা’ হওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত। বাইডেনের আমলেও সেটি অব্যাহত আছে। বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট করেছে, তারা বেইজিংকে তার শীর্ষ বৈদেশিক নীতি অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচনা করে। মার্চ মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন চীনকে আমেরিকার একমাত্র অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত শক্তির চ্যালেঞ্জ হিসাবে অভিহিত করেন। সেই সঙ্গে এই উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জকে গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করারও ইঙ্গিত দেন। এদিকে বাইডেন বেইজিংসহ কয়েকটি পক্ষের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ওয়াশিংটন এশিয়ান পরাশক্তির সঙ্গে একটি নতুন শীতল যুদ্ধের পথে রয়েছে।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতভাবে এই অঞ্চলে চীনের জবরদস্তিমূলক এবং দৃঢ় পদক্ষেপের নিন্দা করেছে। বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান, সেসঙ্গে হংকং এবং জিনজিয়াং প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বাইডেনের অভিযোগ রয়েছে বরাবরই। স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানকে চীন তার নিজস্ব এলাকা বলে দাবি করে বলেই মূলত এ বিতর্ক দীর্ঘ হচ্ছে। চীন দ্বীপে স্থল আক্রমণের কথা অস্বীকার করেনি এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাইওয়ানের আকাশসীমার কাছে রেকর্ড সংখ্যক ফাইটার জেট ওড়াউড়ি করেছে। শি-বাইডেন মুখোমুখি বৈঠকের পর বেইজিং বলেছে, ওয়াশিংটন তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করা আগুন নিয়ে খেলার শামিল।

লেজেগোবরে অবস্থায় আফগানিস্তান ত্যাগ : সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যেখানে ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রত্যাহার নির্ধারিত ছিল, যা ওয়াশিংটনের দীর্ঘতম যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। বাইডেন প্রত্যাহারের সময়সীমা সেপ্টেম্বর ২০২১-এ পিছিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু তালেবানদের দ্রুত গতিতে অগ্রসর হওয়া এবং কাবুল দখল করায় লেজেগোবরে পড়ে যায় মার্কিন প্রশাসন। একটি বিশৃঙ্খল উচ্ছেদের দরুন হাজার হাজার দুর্বল আফগানকে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরিয়াভাবে দেশত্যাগের জন্য জড়ো করেছে, একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১৮০ জন আফগান এবং ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। আর সেই সঙ্গে বিশৃঙ্খল প্রত্যাহার বাইডেন প্রশাসনের বুদ্ধিমত্তার অভাব এবং কৌশলগত ব্যর্থতা ছিল বলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের সৈন্য প্রত্যাহার সুদূর পরাহত : ৯ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন ঘোষণা করেছিল, ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। যদিও এই অঞ্চলের শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার বলেছেন, দেশটিতে ২ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা সদস্য উপদেষ্টা ও সহায়কের ভূমিকা পালন করছেন। অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে। এদিকে সিরিয়ায় থাকা প্রায় ৯০০ মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের আশাও সুদূর পরাহত। বাইডেন প্রশাসন অফিসে প্রবেশ করে বলেছিল, তারা ট্রাম্পের অধীনে স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তি বাতিল করবে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইসরাইল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লোহিত সাগরে একটি যৌথ নৌমহড়ার আয়োজন করেছিল।

বাইডেন ইসরাইলের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং মানবাধিকারের বিষয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থান না নেওয়ায় মে মাসে অন্তত ২৫৬ ফিলিস্তিনি এবং ১৩ জন ইসরাইলি ‘হত্যাকারী’ হিসাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। ওয়াশিংটন তার নেপথ্যের মধ্যস্থতা বজায় রেখেছে সহিংসতার অবসান ত্বরান্বিত করেছে।

ইরান পারমাণবিক চুক্তি : ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি বা জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) পুনরুজ্জীবিত করার একজন কট্টর উকিল ছিলেন বাইডেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তেহরান নিষেধাজ্ঞা উপশমের খাতিরে তার পারমাণবিক কর্মসূচি হ্রাস করেছে। ট্রাম্প চুক্তিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন, পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং রাশিয়াও হেঁটেছিল। তারা ইরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের প্রচারণা চালিয়ে গিয়েছিল।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সময়সীমা এবং কোন নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা হবে সেসব বিষয়ে দুই দেশ এখনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত। রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির আগস্টের নির্বাচনে জয়ের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণ করছে পরোক্ষভাবে। ২৭ ডিসেম্বর তাদের আরেক দফা আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। মার্কিনপ্রধান আলোচক সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতি অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার আগে চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য শুধু কয়েক সপ্তাহ বাকি থাকবে।

ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব : রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাইডেনের প্রাথমিক আশা ভেস্তে গেছে। ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ান সেনামহড়া দেশটিতে আক্রমণের আশঙ্কা আরও প্রকট করেছে। ৭ ডিসেম্বর পুতিনের সঙ্গে একটি ভিডিও বৈঠকের পর বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলে গুরুতর পরিণতি হবে, যা পুতিন ভাবতেও পারেন না।’ এর জবাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে পশ্চিমাদের অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পালটা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাশিয়া।’

আফ্রিকায় চীনা প্রভাব মোকাবিলা : আফ্রিকার প্রতি বাইডেন প্রশাসনের কূটনীতি মূলত ইথিওপিয়ায় চলমান সংঘাত এবং সুদানে সাম্প্রতিক সামরিক দখলের ফল। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের অধীনে চালু হওয়া একটি বাণিজ্য উদ্যোগকে সমর্থন করার দিকে মনোনিবেশ করেছেন তারা। যাইহোক, নভেম্বরে সাব-সাহারান আফ্রিকায় তার প্রথম সফরের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এ বিষয়ে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘মহাদেশটিকে একটি প্রধান ভূরাজনৈতিক শক্তি হিসাবে বিবেচনা করবে এবং শুধু চীনা প্রভাব মোকাবিলার ক্ষেত্র হিসাবে নয়।’ বাইডেন আফ্রিকান নেতাদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি শীর্ষ সম্মেলন করতেও প্রস্তুত। তবে এর কোনো তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।

ল্যাটিন আমেরিকার অভিবাসন নীতি : মধ্য আমেরিকা থেকে অভিবাসনের ‘মূল কারণ’ মোকাবিলার লক্ষ্যে নীতি এবং তহবিল উদ্যোগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে বাইডেন প্রশাসন। আর এ বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments