Wednesday, May 8, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামগ্রাহকের সঙ্গে যুবকের প্রতারণা

গ্রাহকের সঙ্গে যুবকের প্রতারণা

ভুক্তভোগীরা কবে তাদের টাকা ফেরত পাবেন?

যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) আর্থিক প্রতারণার ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও এর মূল হোতাদের এখনো আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বিস্ময়কর হলেও সত্য, যুবকের সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে গ্রহণ ও বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধসংক্রান্ত সরকারের সবস্তরের নির্দেশনা রহস্যজনক কারণে আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ছয় বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। দুই বছর আগে একই বিষয়ে যুবকে প্রশাসক নিয়োগ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর অনুরোধও অদ্যাবধি কার্যকর হয়নি। যুবক নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সাড়ে সাত বছর আগে সরকারের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশও ঝুলে আছে। প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগের মামলায় যুবকের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। এরপর গত ডিসেম্বরে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। অভিযোগ রয়েছে, নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। জানা গেছে, মাথায় গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েই যুবকের সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন প্রতারকরা। অন্যদিকে লাখ লাখ গ্রাহক টাকা হারিয়ে পথে বসেছেন। অনেকে ইতোমধ্যে মারাও গেছেন। প্রশ্ন হলো, যুবকের সেই প্রতারকদের খুঁটির জোর কোথায়? তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দেরি করা হচ্ছে কেন?

২০২০ সালে যুবকের বেদখল সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে নিয়ে তা বিক্রির মাধ্যমে গ্রাহকদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে একজন প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছিলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী। সেটি কার্যকর করতে পাঠানো হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। এখানে এসে আবারও রহস্যজনকভাবে সেটি অন্ধকারে চলে গেছে। ২০১৬ সালে যুবকের ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চাওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশনা দেন। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনও বাস্তবায়ন হয়নি। যুবক নিয়ে এরপরও নেওয়া হয়েছে নতুন সিদ্ধান্ত। কিন্তু গ্রাহকরা তাদের অর্থ ফিরে পাচ্ছেন না। যুবকের সারা দেশে পড়ে থাকা সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। সেসব সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা মেটানো সম্ভব। এ কাজ ধীরগতিতে চললে আলোচিত প্রতারক চক্র কৌশলে সম্পত্তি বিক্রি করতে থাকবে। প্রতারকরা সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিলে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। কাজেই বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

লক্ষ করা গেছে, শুরু থেকেই যুবকের প্রতারণাসংক্রান্ত অভিযোগের সুরাহা করার বিষয়টি অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। ইতোমধ্যে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে, আর নয়। এবার যুবকের প্রতারণার অভিযোগের নিষ্পত্তি হোক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক প্রতারকদের, যেন এ ধরনের কোনো সমিতি আর দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ না পায়। শুধু এ চক্রটিই নয়, দেশে আরও অসংখ্য চক্র রয়েছে, যারা অভিনব কায়দায় নিরীহ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বদাই তৎপর থাকতে হবে কোথায়, কীভাবে প্রতারণা হচ্ছে তা অনুসন্ধানে। যারা যুবকের লাখ লাখ গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, সেসব প্রতারককে দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হলে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্তদের হতাশা বাড়বে, অন্যদিক এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও থাকবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments