বলা হয়ে থাকে জনপ্রিয় গেম অবলম্বনে তৈরি করা চলচ্চিত্র কিংবা টিভি সিরিজ জনপ্রিয়তা পায় না। কিন্তু সেই ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করল ১৫ জানুয়ারি রিলিজ পাওয়া টিভি সিরিজ ‘দ্য লাস্ট অব আস’। সমালোচকরা সিরিজটিকে এখন পর্যন্ত তৈরি করা ভিডিও গেমের যথাযথ রূপান্তর বলছেন। বিস্তারিত মোহাম্মদ তাহমিদের কাছে
কয়েক দশক ধরেই জনপ্রিয় সব ভিডিও গেম, সিনেমা বা টিভি সিরিজে রূপান্তর করা হচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় প্রতিবারই সেসব সিনেমা বা টিভি সিরিজ গেমগুলোর মূলভাবই ধরতে ব্যর্থ হয়, দেখা যায় গেমাররাও সেটা পছন্দ করছেন না বা নতুন দর্শকরাও মজা পাচ্ছেন না। এই ধরনের গেমের মধ্যে আছে—অ্যাসাসিন ক্রিড, ম্যাক্স পেইন, হিটম্যান, ডুম, নিড ফর স্পিড প্রভৃতি।
সনি প্লেস্টেশন ৩ আমলের সবচেয়ে নন্দিত গেম ‘দ্য লাস্ট অব আস’-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি এইচবিওর সিরিজটি অবস্থার পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। প্রথম পর্ব প্রচারের পরপরই সাধারণ দর্শক, গেমটির ভক্ত এবং সমালোচক—সবাই সেটির প্রশংসা করেছেন। বলা হচ্ছে, এই টিভি গেমিং-টিভি ক্রসওভারগুলোর ‘অভিশাপ’ ভাঙতে পেরেছে টিভি সিরিজ ‘দ্য লাস্ট অব আস’।
সিরিজটির প্রথম পর্ব গেমের কাহিনির খুব কাছাকাছি রেখে করা হয়েছে, বাকি পর্বগুলোও এমনই হবে। মূল চরিত্র জোয়েল হিসেবে অভিনয় করেছেন পেদ্রো প্যাসকাল, আর এলি চরিত্রে আছেন টিভি সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’ খ্যাত বেলা র্যামজি।
শুরুতে দেখা যাবে, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এক খনি শ্রমিকের দেহে মিউটেটেড করডিসেপস ফাঙ্গাস বাসা বেঁধেছে, জানা যায় তাঁর দেহে সেটি আরেক আক্রান্তের কামড়ে হয়েছে সঞ্চারিত। কিছুদিন পরই পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে করডিসেপসের এই নতুন জাত, প্রায় সব মানুষ পরিণত হয় ‘ক্লিকার’-এ, যাকে ‘জম্বি’ই বলা যায়। দানবসাদৃশ এসব মানুষ চেষ্টা করে অন্যদের খেয়ে ফেলার, অল্প কিছু মানুষ যারা বেঁচে যায় তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা শুরু করে বেঁচে থাকার। ফলে বিশ্বের বেশির ভাগ সমাজব্যবস্থার পতন হয়ে যায়, কিছু কিছু জায়গায় ছোট ছোট কমিউনিটি তৈরি করে মানুষ টিকে থাকে। সেখান থেকেই কাহিনি শুরু। কিশোরী এলিকে কামড়ানোর পরও সে ক্লিকারে পরিণত হয় না। চোরাকারবারি জোয়েলকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এলিকে গবেষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, যাতে তার শরীর থেকে এই ফাঙ্গাসের ওষুধ তৈরি করা যায়।
গেমে যাঁরা কণ্ঠ দিয়েছিলেন ক্লিকারের, তাঁরা টিভি সিরিজেও কণ্ঠ দিচ্ছেন। অন্যান্য চরিত্রের কয়েকজনও গেমের পর এবার টিভি শোতেও অভিনয় করছেন। পরিচালনায় আছেন গেমটির খোদ পরিচালকও। ফলে ২০১৩ সালের গেমটির পুরো আবহ ২০২৩ সালের টিভি শোতে পাওয়া যাচ্ছে, সঙ্গে থাকছে বাড়তি পাওনা হিসেবে জোয়েল এবং এলির বাইরেও অন্যান্য চরিত্রের কাহিনির কিছু অংশ, কেননা গেমে অন্য চরিত্রদের নিয়ে কাহিনি দেখানোর তেমন উপায় ছিল না।
বাকি সব জম্বি গেমের থেকে ‘লাস্ট অব আস’কে আলাদা করেছে মানবিকতা। এখনো মানুষের মনে আছে ভালো দিনের আশা। এই মেসেজ খুব কম জম্বি গেম বা সিনেমা ও সিরিজে দেখা যায়। জোয়েল আর এলির মধ্যকার চমৎকার বাবা-মেয়ের মতো সম্পর্কও দুই অভিনেতা সুন্দরভাবে ফুটিয়েছেন। এখন কথা একটাই, যাঁরা গেমটি এত দিন খেলেননি তাঁরা কি টিভি সিরিজ দেখে কাহিনি জেনে ফেলবেন নাকি মার্চে গেমটির পিসি সংস্করণ প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।