দেশে বিভিন্ন সময় ‘গুমের’ শিকার হওয়া ব্যক্তিদের আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন স্বজনরা।
শুক্রবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আকুতি জানান। ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পলবীর কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান বলেন, তিন বছর ধরে স্বামীর সন্ধানে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ‘গুম’ শব্দটা দুই অক্ষরের, কিন্তু যন্ত্রণা দিনের পর দিন। ২০১৯ সালে ইসমাইল ‘নিখোঁজ’ হন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে নাসরিন জাহান বলেন, ‘আপনার মানবতার হাত কি আমাদের দিকে একটু বাড়িয়ে দিতে পারেন না? আমার স্বামী বেঁচে আছেন, না কি মরে গেছেন। মরে গেলে আমি তার জন্য একটু মিলাদ দেব। দয়া করে- একবার তার সন্ধান দেন।’ এ সময় অন্য পরিবারের সদস্যরা চোখ মুছতে থাকেন।
ভোলা থেকে এসেছেন বৃদ্ধ কয়ছর আহম্মদ গাজী। ১৯ এপ্রিল রাতে তার ছেলে মো. মহসিনকে রাজধানীর শেওড়াপাড়া থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দেওয়া লোকজন তুলে নিয়ে গেছে। পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মহসিন। তার বাবা কয়ছর গাজী বলেন, ‘আমার মহসিন কই? মহসিন কী অপরাধ করছে?’ কাঁদতে কাঁদতে তিনি শুধু এ কথাটুকুই বলতে পারেন। মহসিনের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ১০ দিন হয়ে গেল। কিন্তু কেউ তার স্বামীর বিষয়ে কোনো তথ্যই দিচ্ছে না। স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
২০১৩ সালে বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেনকে কীভাবে চোখে কালো কাপড় বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়- তার বর্ণনা দেন তার মেয়ে রাইসা। তিনি বলেন, ‘আমি কি বাবার সঙ্গে ইফতার করতেও পারব না। ঈদের নামাজ পড়ে এসে বাবা কি আমাদের সঙ্গে খাবেন না?’ গুলশান থানা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি সাইফুর রহমান সজীবের বাবা শফিক জানান, ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে গুম হয়। তার প্রশ্ন, ‘আমার ছেলে চোর, ডাকাত, না সন্ত্রাসী? বিএনপি করে, এটাই কি তার অপরাধ?’
বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টসের (বিসিএসএম) চেয়ার অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, গুমের কথা স্বীকার না করে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। জনগণের প্রতি ন্যূনতম সম্মান থাকলে এভাবে কথা বলা যায় না। গুমের বিষয়ে সরকার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহি করতে পারলে দেশের জনগণের কাছে জবাবদিহি করছে না কেন?
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান বলেন, রাষ্ট্র যখন তার কৌশল হিসাবে গুমকে ব্যবহার করে তখন এটি বন্ধ করা যায় না।
যতক্ষণ না রাষ্ট্র্র তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। সরকারের কাছে অনুনয় ও কান্নাকাটি করে স্বজনদের ফিরে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী মঞ্জুর হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন, মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান, মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, মায়ের ডাকের এ আয়োজন জাতীয় প্রেস ক্লাবে করতে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু অনুমতি মেলেনি।