পেছনের গল্প
গুগল ম্যাপসে আমরা যে লোকেশন দেখি বা গন্তব্যস্থানে যাওয়ার সময় দেখে থাকি, সেগুলো বাংলাদেশ লোকাল গাইড কমিউনিটির সদস্যরা হালনাগাদ করে থাকেন। আর এই সদস্যদের মধ্য থেকে কিছু নির্দিষ্টসংখ্যক অভিজ্ঞ সদস্য নিয়ে গঠিত প্ল্যাটফরমের নাম ‘রোড ম্যাপার’। রোড ম্যাপারের সদস্যরা কোনো একটা জায়গার রাস্তা যদি ভুল থাকে তাহলে সেটা সংশোধন করেন, একটা রাস্তা আগে ছিল এখন নাই কিংবা সংস্কার হচ্ছে—এগুলো হালনাগাদ করে থাকেন। বাংলাদেশে রোড ম্যাপার সদস্যসংখ্যা ১৫০ জন।
এই রোড ম্যাপারের সদস্যরাই ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু গুগল ম্যাপে সংযোজন করেন। পাশাপাশি এর আশপাশের রাস্তাগুলো সংযোজন, বিয়োজনও করেছেন। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে তাঁরা এই হালনাগাদগুলো সম্পন্ন করেন। এখনো টুকটাক কিছু জিনিস হালনাগাদ করছেন। তবে পদ্মা সেতু সংযোজনের মূল কাজটি করেছেন মাহাবুব হাসান, মাজহারুল ইসলাম ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। পদ্মা সেতুটি গুগল ম্যাপে সংযোজন করতে বা আঁকতে সময় লেগেছিল দুই থেকে তিন দিন। তখন তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়নি। বাংলাদেশ লোকাল গাইড কমিউনিটির মডারেটর মাহাবুব হাসান বলেন, ‘রোড ম্যাপার প্ল্যাটফরমের স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা বিশেষ স্যাটেলাইট ইমেজ এবং তাদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে যুক্ত করছেন বাংলাদেশের নতুন স্থাপনা এবং সড়কগুলো। এক বছর আগেই গুগল ম্যাপে পদ্মা সেতু সংযোজন করা হলেও পাবলিক করা হয় ২০২২ সালের ২১ জুন। ’
গুগল ম্যাপসে যেসব সুবিধা মিলবে
দক্ষিণাঞ্চলের গন্তব্যগুলোকে এখন আরো সহজে এবং স্বল্প সময়ে যাওয়ার জন্য পথগুলোর সঠিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গন্তব্যের দূরত্ব কমে এসেছে এবং সেটা সহজেই এখন হিসাব-নিকাশ করতে সুবিধা হচ্ছে, বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, যশোর অঞ্চলের গন্তব্যগুলোতে যাওয়ার সঠিক সময় নির্ধারণ করা যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব কমে যাচ্ছে ১১২ কিলোমিটার। ঢাকা-কলকাতার দূরত্ব কমছে এই পথে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। দক্ষিণাঞ্চলের কোনো গন্তব্য দিকনির্দেশনা পেতে হলে আগে মাওয়া ফেরি পারাপারসংক্রান্ত একটি নোটিফিকেশন দেখাত। কিন্তু এখন সরাসরি ব্রিজের ওপর দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে যাওয়ার দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। বিশেষ করে যারা মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা অঞ্চলে যাবে তারা স্মার্টফোনে গুগল ম্যাপ চালু করলেই রিয়েল টাইম ডাটা পাবে। আগে এই গন্তব্যগুলোতে যেতে দিকনির্দেশনা ফ্রি সংযোগ কিংবা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দেখাত, এখন সংক্ষিপ্ত পথ হিসেবে পদ্মা সেতুর ওপরে রাস্তাটি দিকনির্দেশনা দিচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পথনির্দেশিকা হিসেবে।
গুগল ম্যাপসে কেমন দেখাচ্ছে সেতুটি?
বর্তমানে গুগল ম্যাপে যুক্ত রাস্তাটি হলুদ বর্ণ অর্থাৎ ন্যাশনাল হাইওয়ে হিসেবে দেখাবে এবং ট্রাফিক জ্যামের আপডেটও পাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানে রাস্তা সংস্কারকাজ চলছে এমন সংকেত রয়েছে। ২৫ জুন পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের পর থেকেই ট্রাফিকও দেখা যাবে। তবে এসংক্রান্ত নোটিফিকেশন এবং স্যাটেলাইট ইমেজ আপলোড হতে আরো বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশের গুগল ম্যাপ ব্যবহারকারীদের। এখন স্যাটেলাইট মুডে দেখতে চাইলে পদ্মা সেতু দেখা যাবে না। গত মাসে স্যাটেলাইট আপডেট হয়ে গেছে, তখন পদ্মা সেতুটি আপডেট হয়নি। যখন স্যাটেলাইট ইমেজ আপডেট হবে, তখন পদ্মা সেতুর রিয়েল টাই ভিউ দেখতে পাবে ব্যবহারকারীরা। অন্যদিকে গুগল ম্যাপে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এখনো আপডেট করা হয়নি। রোড ম্যাপার জানিয়েছে, তা কিছুদিনের মধ্যে সংযুক্ত করা হবে।
পদ্মা সেতু দিয়ে আপনার গন্তব্য কত?
বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা যেকোনো স্থানে যাওয়ার জন্য গুগল ম্যাপে দেখে থাকে, যা নির্দিষ্ট গন্তব্যের দূরত্ব এবং সহজ পথ নির্দেশিকা। আপনার গন্তব্যস্থলে যেতে কত মিনিট সময় লাগবে কিংবা কোনো ট্রাফিক জ্যাম আছে কি না, গুগল ম্যাপ দেখাবে সেই তথ্যটিও। যেকোনো রাস্তার সর্বশেষ আপডেটগুলো গুগল ম্যাপ থেকেই একজন ব্যবহারকারী পেয়ে থাকে। যেমন—কোথায় কিংবা কোন রাস্তায় কাজ চলছে, ট্রাফিক জ্যাম কেমন, রাস্তায় টোল দিতে হবে কি না ইত্যাদি তথ্য সহজেই জানা যায়। গুগল ম্যাপে পদ্মা সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পর থেকে যেকোনো ব্যবহারকারীই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াতে দূরত্বসহ সব ডাটা দেখতে পাবে।
কিছু কিছু ছোট রাস্তা এখনো সংযুক্ত হয়নি
পদ্মা সেতুর আশপাশের রাস্তা সংস্কারের কারণে স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে দেখা যাচ্ছে, সেখানে রাস্তা আছে, আবার বাস্তবে গিয়ে দেখা গেল সেখানে রাস্তা নেই বা সংস্কার চলছে। এসব কারণে রোড ম্যাপাররা ছোট ছোট কিছু শাখা-প্রশাখা রাস্তা গুগলে সংযুক্ত করা থেকে বিরত রয়েছেন। তবে শিগগির সেগুলো হালনাগাদ করা হবে।